কিছুক্ষণ আগেই আমার ক্রাশ শাওনের সাথে আমার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়।
শুধু যে আমার ক্রাশ তা নয়,আরো অনেকেরই ক্রাশ ছিল। না পাওয়ার প্রতি বোধহয় মানুষের একটু বেশিই আকাঙ্ক্ষা থাকে। যদিও শাওন কাউকেই পাত্তা দিতো না। আমি অবশ্য বাকি সবার মতো পিছু পিছু ঘুরঘুর করতাম না।
এখন হয়তো প্রেমটা সোজাসাপটা। কিন্তু একটা সময় ছিল,যখন মনের মানুষটার সাথে দেখা করা বা তাকে পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতে হতো। আমিও তেমনি ভাবে খুব যতনে ভালবাসাটাকে মনের ভেতর লালন করে চলেছি। ভালবাসার একটা রঙিন তাজমহল গড়ে তুলেছিলাম মনের আঙিনায়। কিন্তু বাসা থেকে বিয়ের কথা বলতেই সেই তাজমহলের সাথে আমার মনটাও টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
মা যখন আমার সামনে ছেলেটির একটি ছবি রাখে তখন ইচ্ছা করছিল ধারালো চাকু দিয়ে ছবির সাথে সাথে ছেলেটাকেও টুকরা টুকরা করে ফেলি। কিন্তু কী আর করার,মায়ের সামনে তো আর এসব করা যাবে না। তাই একরাশ অভিমান নিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলেটার ছবি দেখলাম। ওমা এ দেখি শাওনের ছবি! আমি ভুল কিছু দেখছি নাতো? চোখ কচলে আবারো ছবিটার দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। এবারো তাই দেখলাম। শাওনের চিন্তায় চোখটা কী একেবারেই গেছে কিনা বুঝতে পারছি না,চারিদিকে শুধু শাওনকেই দেখতে পাই। আর একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাকে জিজ্ঞাসা করলাম,"মা, ছেলেটার নাম কী?"
-মা কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে"ছেলেটির নাম শাওন।" তারপর বেশ কর্কশ গলায় বলে,"পছন্দ না হলে এখনি বলে দে। নইলে ওদের আসতে নিষেধ করবো। বাড়িতে মেহমান আসার পর ঝামেলা পাকিয়ে আমাদের মান ডুবাবি তা হবে না।"
--আমি খানিকটা মুচকি হেসে বললাম,"না না মা,এইবার আর একটুও ঝামেলা পাকামু না।" মা বিশ্বাস করলো কিনা জানিনা। তারপর লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে বললাম,"আমি বাচ্চা মানুষ বিয়ার কি বুঝি, তোমরা দেখো যা ভালো বোঝো।"
মা খানিকটা নিশ্চিন্ত মনে মুখে একটা সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। দাদী পানের কৌটা থেকে একটা পান মুখে গুঁজে দিতে দিতে বলে,"ওই ছেমড়ি,তুই বিয়া না করলে আমারে কইতে পারোস। পোলা কিন্তু আমার সেই পছন্দ হইছে। অনেকটা তোর দাদার মতো।" একথা বলেই হো হো করে হেসে ওঠে।
-দেখছো বুড়ির শখ কতো! আমার ক্রাশের দিকে নজর দেয়! বিড়বিড় করে বুড়িকে হাজারটা গালাগাল করলাম।
সেদিন রাতে শাওনের কথা ভাবতে ভাবতে গভীর রাত অব্দি কিছুতেই দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না। তার ওপর বুড়ির ফাউ প্যাঁচালে ঘুমানোটা আরো দুষ্কর হয়ে উঠলো। একে তো ষাড়ের মতো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, তার ওপর কিছুক্ষণ পর পর উঠে বলছে,"না ঘুমাইয়া কী কুবুদ্ধি জুটাইতাসোস ক'তো দেহি,আগেই কইছি পোলা পছন্দ না হইলে আমারে দিয়া দে।"
এইবার আর মেজাজটা ঠিক রাখতে পারলাম না। বেশ ঝাঁঝালো স্বরে বললাম,"বুড়ি আমার জামাইয়ের দিকে কুনজর দেও কেন? আমি কী তোমার জামাইয়ের দিকে দিছি নাকি?"
দাদী কিছুই বললো না। শুধু হো হো করে হাসতে হাসতে আবারো ঘুমিয়ে পড়ে। আর সঙ্গে সঙ্গে তার ডাক ডাকার মেশিন চালু হয়ে যায়। বুঝলাম না বুড়িটা আজই কেন আমার সাথে ঘুমাতে আসলো। আচ্ছা শাওনেরও যদি এরকম বদ অভ্যাস থাকে তখন কী হবে? এসব ভাবতেই মনটা হুহু করে কেঁদে ওঠে। পরক্ষণে নিজেকে শান্তনা দিতে থাকি যে শাওনের এরকম বদ অভ্যস থাকবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ি। শেষরাতে দাদীর ডাকে ঘুম ভাঙে। ফজরের আজান কানে ভেসে আসছিল। তারমানে ভোর হয়ে গেছে। আমি খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললাম,"কী হইছে বুড়ি এতো চিল্লাইতাছো কেন?"
--দাদী আমাকে একটুখানি ধাক্কা দিয়ে বলে,"ওই ছেড়ি,চিল্লাইতাছি কী আর স্বাধে?দেখোস না আজান দিতাছে। যা ওযু কইরা নামাজ পড়। পোলাডা যা ভালো দোয়া কর যাতে এই বিয়াডা হয়।"
--বুঝলাম না এই বুড়িটা শাওনের পিছে লাগছে কেন? কথায় আছে না, যার বিয়া তার খবর নাই,পাড়াপড়শির ঘুম নাই। অন্য কেউ হলে এই বুড়িরে দিয়া দিতাম,কিন্তু শাওনকে কোনো মতেই না। তাই নামাজ পড়ে সত্যি সত্যিই দোয়া করতে থাকলাম যেন শাওনের পরিবারের সবার আমাকে পছন্দ হয়।
বাইরে পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছে। ভোর হতেই রান্নাঘরে মায়ের পিছু পিছু ঘুরঘুর করতে লাগলাম। মা মাঝে মাঝে কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে। অবশ্য তাকাবেনা কেন এর আগে যেসব কান্ড করে তিন তিনটে বিয়ে ভেঙেছি,এজন্য হয়তো এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। তারপর উপচে পড়ে মাকে টুকটাক সাহায্য করছি। আচমকা মা গরম খুন্তি হাতে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে," রান্নাঘরে এতো ঘুরঘুর করছিস কোন মতলবে?"
-আমি খানিকটা বিচলিত হয়ে বললাম,"কি যে বলো না মা,মতলব আবার কী? আমি তো আসলাম তোমারে একটু সাহায্য করতে।"
--মা এবার গরম তেলে পেয়াজ কুচি দেওয়ার মতো ঝাঁঝালো স্বরে বলে, "এর আগে তো কখনো রান্নাঘরে দেখি নাই। দেখ দুপুরের দিকে তারা আসতে চেয়েছে,এখন যদি না বলিস তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।"
--"আরে ধুর মা,তুমিও না।" রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে এলাম। দাদী আমাকে দেখে আবারো হাসছে। বুঝে উঠতে পারছি না বুড়ির আচানক হাসির রোগ হয়েছে কিনা! আমাকে দেখলেই কারণে অকারণে হেসে ওঠে।
যাইহোক, দুপুর হওয়ার আগেই সাজগোজ করতে বসে পড়লাম। কিন্তু কী যে পড়বো বা কিভাবে সাজবো বুঝে উঠতে পারছি না। আলমারি থেকে একগাদা কাপড় বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছি। দাদী দরজায় দাঁড়িয়ে আমার এসব কান্ড কারখানা দেখে হাসতে হাসতে বলছে,"কী গো বু,মনে রঙ লাগছে নি। আজ এতো সক্কাল সক্কাল রেডি হইতাছো।"
মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকলাম,"আমাকে রাগানোর জন্য এসে পড়ছে আমার সতিন।" তবুও ভাবখানা এমন করলাম যেন,আমি বিয়ের জন্য মোটেও উৎসুক নয়। মেজাজটা শান্ত রেখে শুধু মুখ বাকিয়ে বললাম,"না সাজলে ওতো তোমাদের মন ভরবে না। আগেরবার তুমি যেই চিমটি দিছিলা হাতের মাংসসহ নিয়া গেছিলা। এইবার আর চিমটি খাইতে রাজি না।" উত্তরটা দাদীর যুতসই হলো কিনা জানিনা। দাদী মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো।
দুপুর দুটোর দিকে কিছু লোক আমাদের বাসায় আসে। নিয়মানুযায়ী আমাকে তাদের সামনে নিয়ে আসা হলো। আমিও লক্ষী মেয়ের মতো মাথায় একটা লম্বা ঘোমটা দিয়ে তাদের সামনে বসে রইলাম। কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম,এরা শাওনের মা,বোন আর বোনের হাসবেন্ড। সাথে অবশ্য শাওনও এসেছে। তারা বেশ হাসি হাসি মুখ করে খোশগল্পে মেতে উঠলেন। শাওন আমার দিকে তাকিয়েছিল কিনা জানিনা। তবে আমি ঘোমটার ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে শাওনকে দেখছিলাম। আর দোয়া করছিলাম এদের যেন আমাকে পছন্দ হয়। যথারীতি আমার বিয়ের ইন্টার্ভিউ শেষ হলো। আমি আগের মতো আস্তে আস্তে নিজের ঘরে চলে এলাম। দরজার আড়ালে লুকিয়ে তাদের কথোপকথন শুনতে লাগলাম। দেখলাম, দাদী একদম শাওনের পাশে গিয়ে গা ঘেসে বসে আছে। বুঝলাম না বুড়ি কী শাওনের কোলে গিয়ে বসতে চাইছে কিনা! বুড়ির কান্ডকারখানা মোটেও সুবিধাজনক না।
আমি আড়চোখে তাকিয়ে গজ গজ করতে থাকলাম,"এই বুড়ি সরে বসো।" এই বুড়িটাও না একেবারে যা তা। আমার কথা কানেই তুললো না। আমার দিকে তাকিয়ে বেশ কয়েকবার চোখ মারতে থাকে। তারপর আমাকে দেখিয়ে আরো গা ঘেসে বসতে থাকে। আমিতো রীতিমতো হা হয়ে গেলাম।
রাতের দিকে শাওনের মায়ের ফোন আসে। আমাকে তাদের খুবই পছন্দ হয়েছে। আমাদের বাসার কয়েকজনকে সামনের শুক্রবারে তাদের বাড়ি যেতে বলেছে,দাদীর মুখে শুনেছি সেদিনই নাকি পাকা কথা হবে। কিন্তু এবার শুক্রবার আসতে এতো হচ্ছে কেন কে জানে?
অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে শুক্রবার চলে এলো। বাবা, মামারা আর দাদী গিয়ে কথা পাকা করে আসে। পনেরো দিন বাদেই বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। দাদীতো ও বাড়ির গুনগানে পঞ্চমুখ। মনে মনে বলতে লাগলাম,"কার শশুড় বাড়ি দেখতে হবে না।"
এভাবেই দিন যেতে থাকে। কিন্তু শাওনের সাথে আমার এখনো কথা হয়নি। আর হবেই বা কি করে আমার যে একখান সতিন আছে না! ফোন করলে সে নিজেই কথা বলে,শাওন বেচারা লজ্জায় হয়তো আমাকে চাইতে পারে না। তার ওপর এই বুড়ি আবার আগবাড়িয়ে বলতে থাকে,"আমাগো আঁখি,ভারী লাজুক। কথা বলতে ভীষণ লজ্জা পায়। এই দেখো না আমি তোমার সাথে কথা বলছি এতেই লজ্জায় লাল হয়ে পাশের ঘরে চলে গেলো।"
আল্লাহ গো,এই যন্ত্রণা কেমনডা লাগে! নিজের ফোন থাকলে আজ হয়তো এই দিনটা দেখতে হতো না। মনে মনে ভাবলাম,"একবার বিয়েটা হোক তারপর এই বুড়ির মজা দেখাবো।"
এভাবেই আরো কয়েকদিন কেটে যায়। বিয়ের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। আমার খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী জান্নাতকে বিয়ের কার্ড দিতে যাই। পথিমধ্যে শাওনকে দেখতে পাই,পার্কের দিকে যাচ্ছে। সাথে একটা মেয়ে। মেয়েটা শাওনের সাথে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে যেন শাওনের প্রেমিকা। কেমন যেন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলাম। নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না। রিকশাভাড়া মিটিয়ে ওদের পিছু নিলাম। সোজা ওদের সামনে গিয়ে মেয়েটাকে প্রশ্ন করলাম,"ও তোমার কী হয়?
মেয়েটা চটজলদি উত্তর দিলো এটা তার বয়ফ্রেন্ড। শুনে তো আমার মাথায় খুন চেপে গেলো। শাওনের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললাম,"পাঁচ দিন পর তোমার আমার বিয়ে হতে চলেছে,আর তুমি এখানে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে ছিঃ..." কথাটা বলতে গিয়ে আমার গলাটা ভারি হয়ে আসে। শাওন কেবলার মতো হা করে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর আমতা আমতা করতে থাকে। মেয়েটা তখন বলে,"লুচ্চা কোথাকার। তোর সাথে ব্রেকআপ। আর কখনো আমাকে ফোন দিবি না।" বলেই হনহন করে যেতে থাকে। আমিও মনে একরাশ বেদনা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে মনে মনে পণ করলাম,"বিয়ের পরে এই ব্যাডার জীবন ত্যানা ত্যানা কইরা ফালামু। হুদাই আমারে কান্দাইছে।"
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো। বিয়েটাও খুব সুন্দরভাবে সুসম্পূর্ণ হয়। পরিবার ছেড়ে দূরে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু এটা যে হবারই ছিল। বাবা চোখের পানি আড়াল করে আমাকে গাড়িতে তুলে দেয়। দূরে দাঁড়িয়ে মা আর দাদীও কাঁদছিল। বুড়িটা আমাকে কাঁদতে নিষেধ করেছিলো। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে কী না কেঁদে থাকা যায়। সারাটা পথ কাঁদতে কাঁদতে এলাম।
হঠাৎ গাড়িটা থেমে গেলো,তার মানে আমরা পৌছে গেছি।
সবাই হৈ হুল্লোল করে ছুটে আসতে থাকে। গাড়ি থেকে বেশ সাবধানে আমাকে নামানো হয়। ওনাদের সব নিয়মাদি মেনে ফুল দিয়ে সুসজ্জিত একটা ঘরে আমাকে বসানো হয়। কোনো কাজ না পেয়ে ঘরের চারিদিকটায় চোখ বুলাতে থাকি। বেশ সুন্দর করেই সাজানো হয়েছে। তবুও খানিকটা বিরক্তবোধ করলাম,অনেক্ষণ হলো বসে আছি,এখনো শাওনের আসার নামগন্ধ নেই।
আজব কিসিমের এই লোকটা ফুলসজ্জার ঘরে আমাকে একা রেখে উধাও হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পর শাওন ঘরে উঁকি দেয়, আমি সামান্য একটু কাশি দিয়ে নড়েচড়ে বসি। অলংকারের খানিকটা ঝনঝনানি শব্দ হয়। কিন্তু মনে হচ্ছে ও কাকে যেন খুঁজছে । তারপর চোরের মতো ধীরপায়ে ঘরে ঢোকে।
--আমার সামনে এসে একটা ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বলতে থাকে,"বহুত জালাইছো,আমার ব্রেকআপ করাইছো,এইবার যাইবা কোথায় সোনার চাঁদ। শুধে আসলে সবটা উশুল করবো,তুমিই আবার আমার প্রেম জোড়া লাগাইবা।" এ কথা বলেই হো হো করে হাসতে থাকে। বিয়ের রাতে কোন মেয়ে এরকম কথা শুনতে প্রস্তুত থাকে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি বোধহয় স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু না এটা বাস্তব। মাথাটা তখন ভোঁ ভোঁ করতে থাকে,মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবো। তারপর আর কিছুই মনে নেই।
কিছুক্ষণ পর যখন চোখ মেলে তাকায় তখন দেখতে পাই,শাওনের বোন রুমা আপু,আমার মাথার কাছে বসে আছে,হাতে পানির গ্লাস। কিন্তু খানিক বাদেই চমকে উঠি দু দুজন শাওনকে দেখে। দৃষ্টি বিভ্রাট তো হয়েছেই,সাথে মনে হচ্ছে আবারো জ্ঞান হারাবো। কিন্তু এইবার জ্ঞান হারানোর আগেই রুমা আপু জানালো শাওন আর সোহান জমজ ভাই। আমি খানিকটা নিশ্চিন্ত হলাম। অতঃপর ভ্রু কুঁচকে লজ্জায় লাল হয়ে ভাবতে লাগলাম,"তাহলে পার্কের ওটা সোহান ছিল। ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছেলেটার ব্রেকআপ ঘটিয়েছি এটা ভেবেই খারাপ লাগছে।"
রুমা আপু চলে গেলো। শাওন আর সোহান দুজনেই আমার সামনে চলে আসে। কিন্তু আমি রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। রুমা আপু তো বলে গেলেন না কোনটা আমার শাওন। বেকুবের মতো দুজনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। দুজনেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। তারপর একজন মিটিমিটি হেসে তার বাম গাল আমার দিকে এগিয়ে বলে ,"এই যে তিলটা দেখতেছো এই তিলের মানুষটা হলো সোহান। আর যার মুখে তিল নাই সেটা হলো শাওন। নিজের বরকে চিনে রাখো। রাস্তাঘাটে যখন তখন আবার আমাকে বর ভেবে বসো না।"
কথাগুলো শুনে ভীষণ লজ্জা পেলাম। সোহান হাসতে হাসতে চলে গেলো। বেচারার জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল। তবে যাইহোক, নিজের জামাইকে যে চিনে রাখছি এটাই অনেক। এরপর থেকে আর ভুল হবে না।
(সমাপ্ত)
Comments (0)