বকুল শেখ তার লালসা মিটিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে রাত বারোটায় বাসায় ফিরছে তার মনে আজ পরম শান্তি এতদিনের আশা সব পূর্ণ হল। খুব ইচ্ছা ছিল মরিয়মকে আপন করে পেতে, মরিয়ম রাজি হলো না তাই জোর করে তুলে নিয়ে যায় বকুল শেখ। আব্দুল্লাহপুর গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী লোক বকুল শেখ, বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিন মেয়ে এক ছেলে মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, ছেলে শহরে থেকে মাস্টার্স এ লেখাপড়া করে।
অনেক জমিজমার মালিক বকুল শেখ তাই তার কাছে ধরাকে সরা জ্ঞান মনে হয়, সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। গ্রামের নদীর ধারে মরিয়ম এর বাড়ি সেখানে বকুল শেখের জমি আছে সেটা দেখতেই পনেরো দিন আগে বকুল শেখ সেখানে গিয়েছিল, মরিয়মের সাথে দেখা হয়ে যায়। মরিয়মকে দেখেই বকুল শেখের কুনজর পড়ে।
মরিয়মের বাবা আব্দুল মিয়া পরের জমিতে কলা চাষ করে কোনভাবে টেনেটুনে মরিয়মদের দিন চলে যায়। বকুল শেখ সুযোগ বুঝে একদিন মরিয়মদের বাড়িতে যায় পানি খাওয়ার বাহানা করে। মরিয়মকে একা পেয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। মরিয়ম ভয় পেয়ে দৌড়ে ঘরে যেয়ে দরজা বন্ধ করে, বকুল শেখ দরজায় গিয়ে ধাক্কায়। সেসময় বাড়িতে কেউ ছিল না, মরিয়ম এর মা কি যেন কাজে মাঠে গিয়েছে মরিয়মের ভয়ে শরীর কাঁপছিল ঘরের দরজা বন্ধ করে। এমন সময় মরিয়মের ছোট ভাই স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে, বকুল শেখ মরিয়মের ভাইকে দেখে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে চলে যায়। মরিয়মের মা বাড়িতে এলে মরিয়ম তার মাকে সবকিছু বলে মরিয়মের বাবা এই কথা জানতে পেরে বকুল শেখের কাছে যায়। যেয়ে তাকে বলে আপনি কেন আমার মেয়ের সাথে এরকম করছেন, বকুল শেখ হুমকি দেয় যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস এই গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে দেবো, আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিস, তোর মেয়ে দুশ্চরিত্রা আমার কাছ থেকে টাকা খেতে চাস তোরা বাপ মেয়ে মিলে। আব্দুল মিয়া এই কথা শুনে ভয়ে চলে আসে, আব্দুল মিয়া গরিব মানুষ তাই সে আর বেশি কিছু বলতে সাহস পায় না।
আজ বকুল শেখ রাত নয়টার দিকে জোরপূর্বক ভাবে মরিয়মকে উঠিয়ে নিয়েছে ধর্ষণ করে তার একটা পুড়াবাড়ি নিয়ে। সেখানে সে অনেক মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছে এই গ্রামের যে মেয়েটিকে তার নজর পড়ে সেই মেয়ের সাথে এমন নষ্টামি করে। প্রভাবশালী দেখে থানা পুলিশ কিছুই হয় না। নয়টার দিকে মরিয়মকে তুলে নিয়ে বারোটার সময় তার বাড়ির সামনে দিয়ে গিয়েছে, এবং বলেছে যখনই তার মন চাইবে সে যেন ডাকলে মরিয়ম পুড়া বাড়িতে চলে আসে।
মরিয়মের বাবা মা মেয়েকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল মরিয়ম বলল সে এজীবন রাখবে না অনেক, মরে যাবে। মরিয়মের মা বাবা বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েকে বলল, যা হওয়ার হয়েছে আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রাম থেকে চলে যাব। মরিয়ম এর বাবা তার বাড়ি বিক্রি করার জন্য মানুষজন দেখতে লাগলো, সে আর এই গ্রামে থাকবেনা, যেভাবেই হোক মেয়ের জীবন বাঁচাতে হবে।
এরমধ্যে বকুল শেখ আবার মরিয়মের বাড়িতে এসে বলে গেল আজ রাতে যেন মরিয়ম তার কাছে যায়, এর অন্যথা হলে জোর করে তুলে নেওয়া হবে। বকুল শেখ যাওয়ার পর মরিয়ম সিদ্ধান্ত নিল সে আত্মহত্যা করবে এ জীবন রাখবে না। তাই সে সুযোগ বুঝে বিকেলের দিকে রেললাইনের পথে পা বাড়ানো ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মরার জন্য। তার বাড়ি থেকে কিছু দূরত্বেই রেললাইন মরিয়ম জীবনের মায়া ত্যাগ করার আগে মা-বাবা ছোট ভাইয়ের মুখখানা তার চোখের সামনে ভাঁসছে তবু সে বকুল শেখের লালসার হাত থেকে রেহাই পেতে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পিছুপা হলো না।
রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে রেলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো সেই সময় বকুল শেখের ছেলে সেলিম ঢাকা থেকে ফিরছিল। রাস্তার উপর একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারল কোন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে কিছুক্ষণ পরই তো ট্রেন আসবে। সেলিম রিক্সা থেকে নেমে রেল লাইনের কাছে এসে দেখে তাদের গ্রামের মেয়ে মরিয়ম।
মরিয়মের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে রেললাইন থেকে নামিয়ে আনলো সেলিম। জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে কেন তুমি এই বয়সে মরার জন্য রেললাইনের উপর এসেছ। মরিয়ম কিছু না বলে কান্না করে যাচ্ছে।
সেলিম এবার জোরে ধমক দিয়ে বলল কি জানতে চাইছি বল।
মরিয়ম বলল, আমি কিছু বলতে পারব না, মরতে যাচ্ছি মরতে দেন, আমাদের মত অসহায় গরীব মানুষের বেঁচে থেকে কি হবে আপনাদের মত টাকাওয়ালা মাইনসের হাতে ইজ্জত সম্মান হারাতে হয় তাই আর বেঁচে থাকবো না।
সেলিম জানতে চায় কি হয়েছে সবকিছু খুলে বল আমাকে, অবশ্যই আমি সবকিছু সমাধান করতে চাইবো।
মরিয়ম কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, আপনি কোনকিছু সমাধান করতে পারবেন না, যখন শুনবেন আপনার বাবা আমার সাথে কি করেছে।
আমার বাবা মানে আমার বাবা তোমার সাথে কিছু করেছে।
কিছু করেছে মানে কি, সে আমার ইজ্জত লুটে নিয়েছে আজ আবার তার কাছে যেতে বলছে, পতিতা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
সেলিম তার বাবার কথা শুনে সহ্য করতে পারলো না তার দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, তার বাবা এতটা জঘন্য সে আরও দুই একবার তার বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছিল তার বাবার চরিত্র ভালো নয় কিন্তু সে বিশ্বাস করতে পারেনি আজ মরিয়মের মুখ থেকে শুনে তার দুনিয়াটা উলটপালট হয়ে গেল। এখন তার ইচ্ছা করছে বাবা নামক অমানুষটাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার, নিশ্চয় তাকে উচিত শিক্ষা দেবে।
রাত আটটার দিকে রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে বকুল শেখ তার মন মেজাজ খুব ফুরফুরে। মরিয়মের মত একটা যুবতী মেয়ের সাথে সবকিছু করা অনেক আনন্দের বিষয় বকুল শেখের কাছে। বকুল শেখ ঢেকুর তুলতে তুলতে যখন সদর দরজায় এসে দাঁড়ালো তখনই তার ছেলে, সঙ্গে করে একটি মেয়েকে নিয়ে আসছে। মেয়েটি বধু রূপে মনে হয় তার ছেলে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। এক মুহুর্তে বকুল শেখের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল যখন সে দেখল তার ছেলের তারই লালসার শিকার মরিয়মকে বিয়ে করে নিয়ে আসছে।
বকুল শেখ ছেলের প্রতি খুব রেগে গিয়ে বলল এই গরিবের বাচ্চাকে বিয়ে করে নিয়ে আসছিস এটা আমি কখনোই মানবো না, এই মুহূর্তে তুই এই মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দে, না হলে আমি তোকে ত্যাজ্যপুত্র করবো। সেলিম বাবার কাছে এসে কানে কানে বললো, তুমি মরিয়মের সঙ্গে কি করছো আর আজ কি করতে চেয়েছ, এখন যদি আমি তোমার ছেলে হয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে সব বলে দেই। আর গ্রামের লোকজন যখন জানতে পারবে তুমি মরিয়মকে ধর্ষন করছো আর তোমার দ্বারা ধর্ষিত মেয়েকে আমি বিয়ে করছি মুখ দেখাতে পারবে এই গ্রামে। তুমি আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করলেও আমার কোন আফসোস নেই, আমি মরিয়মকে নিয়ে ঢাকা চলে যাবো৷ তার আগে তোমার কুকর্মের কথা সারা গ্রামে জানিয়ে যাবো এবং আমি নিজে তোমাকে ত্যাজ্য পিতা বলে ঘোষণা দেবো।
ছেলের এমন কথা শুনার পর বকুল শেখ একদম ভেঙে পড়ে, নিজে নিজে পুড়তে থাকে, দুইদিন পর একরাতে বকুল শেখ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। সকালে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে, বকুল শেখের হাতে একটা চিরকুট পাওয়া যায়, সেখানে লেখা ছিল,,,,
আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দ্বায়ী, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলাম....
আমার এই গল্পটা লেখার উদ্দেশ্য হলো, আমাদের গ্রাম্ অঞ্চলে এখনো অনেক বকুল শেখ রয়েছে, যারা নিজের প্রভাবপ্রতিপত্তির দাপট খাটিয়ে অনেক অসহায় নারীর ইজ্জত লুন্ঠন করে নেন। হয়তো তাদের বিচার করার মত কেউ নেই, কিন্তু উপরে একজন আছেন, সে তার ন্যায় বিচার একদিন না একদিন ঠিকই করবেন।
সমাপ্ত
Comments (0)