____'মা আমার ফোনটা দরকার খুব। তুমি কিনে দিবা কি না? যদি না দাও সেটা বলে ফেলো আমায়। আমি নিজেই কোন একটা ব্যবস্থা করে নিব।'
খাবার টেবিলে বসলেই রোজ রোজ অভিকের এই কথাগুলোর কোন জবাব নেই শাহিনা খানমের কাছে। একেতো মধ্যবিত্ত পরিবার, তার উপর স্বামীর অকস্মাৎ মৃত্যু হলো বছর দুয়েক আগে, এখন কোনরকমে দিন চলে তাদের। অথচ ছেলেটার আবদার ফুরায় না। এইতো চার মাস আগেই ফোন কিনে দিলেন, এত তাড়াতাড়ি সেটাও নষ্ট হলো? শাহিনা অভিকের প্লেটে মাছের মাথাটা তুলে দিতেই অভিক প্লেটটা হাতের ধাক্কায় ছুঁড়ে ফেলল। ভাতটুকু সারা মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো, মাছের মাথাটা পড়ে রইল এককোণে। শাহিনা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ছেলের মাথায় হাত রেখে শান্তস্বরে বললেন____'আজ রাস্তায় হাঁটার সময় আশপাশটা একটু ভালোভাবে খেয়াল করবা।'
শাহিনা খানমের কথা বিন্দুমাত্র পছন্দ হলো না অভিকের।____'খরচ চালাইতে পারবা না তো পয়দা করছিলা ক্যান?' মুখের পর কথাটুকু বলেই ঘরের চৌকাঠ পেরোয় অভিক। ন'মাস গর্ভে ধারণকারীর নিকট এই বাক্যটা যে কত মর্মান্তিক তা যদি সন্তানরা বুঝতো। শাহিনা চোখের জল ফেলতে ফেলতে তৈরি হন স্কুলের জন্য। তিনি এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বল্প বেতনের শিক্ষিকা। ব্যস্ত ভঙ্গিতে সবকিছু পরিষ্কার করে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
রাস্তায় হাঁটছে অভিক। না চাইতেও বারবার আশেপাশে চোখ যাচ্ছে। এক বৃদ্ধ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছেন। বৃদ্ধা এক মহিলা ফুলের ঝুড়ি কাঁধে নিয়ে সবাইকে সাধছেন
ফুলের জন্য। বাচ্চা একটা ছেলে বাদাম বিক্রি করছে। চারপাশে সবাই এত অসহায় কেন আজ? অভিকের পকেটে দশ টাকা। তার ইচ্ছে করছে এই বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, বাচ্চাকে সাহায্য করতে কিন্তু সে তো নিজেই অসহায়। অভিক কিন্তু চাইলেই পারত মাসে মাসে শতশত টাকা অপচয় না করে এই গরিবদের সাহায্য করতে। মায়ের কষ্টের টাকা আর কত ধ্বংস করবে সে। একটা মুহূর্তের জন্য সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায় অভিকের নিকট। অতঃপর মুচকি হেসে পকেট থেকে পুরনো ফোনটা বের করে সে। শাহিনা খানমের নম্বর ডায়াল করে____'মা, আমার নতুন ফোন লাগবে না। তোমার দোয়া লাগবে যেন নিজ উপার্জন দিয়ে তোমার আবদার আর অসহায় মানুষগুলোর প্রয়োজন পূরণ করতে পারি।'
শাহিনা খানম হাসেন। অবশেষে ছেলেটা তার অসহায়ত্বের মানেটা বুঝেছে। এখন তার ছেলে আর অযথা অপচয় করবে না। কৃতজ্ঞতায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রশংসা জ্ঞাপন করেন তিনি।
সমাপ্ত।
লেখা-সাদিয়া নাজনীন
Comments (0)