Search

আধুনিকা_বউ (রম্য গল্প) 

  • Share this:

আমার বউ নাকি শরীর শক্ত করার মেশিন কিনেছে।

বিদেশ থাকাবস্থায় কথাটা মায়ের কাছ থেকে শুনে আসতেছি আমি।

কিন্তু, এ কথাটা কোন দিনও জিজ্ঞেস করা হয়নি তাকে।

বাড়িতে এসে দেখি টপটপে সুন্দরী বউটা শুকিয়ে একেবারে অন্তঃসার শূন্য।

ভোজন রসিক, উচ্চ বিলাশী, ভরপুর শরীর'টা হয়ে উঠেছে লৌহদণ্ডের ন্যায়।

বিছানায় গেলে মনে হয়, মোটামোটি ধরনের একটা রোবটের সাথে শুয়ে অাছি।

অদ্ভুত রকম অঙ্গভঙ্গি, কথা বার্তার ধরন, ঘামার্ত শরীরেও ক্লান্তিহীনতা প্রদর্শন বেশ অবাক করে অামাকে।

এ কেমন বাঙালী নারী!

.

বিদেশ থাকাবস্থায় অন্য সবার মতোই কথা হতো আমাদের।

কিন্তু তার যে এমন অবস্থা, ভিডিও কলে টের পাইনি তখন।

যতটুকো জানতাম সে আগের থেকে অনেকটা স্বাস্থ্য সচেতন।

ভালো কথা।

.

এসে দেখি পুরোটাই উল্টো।

বউয়ের মুখে শুধু দিনভর একটাই কথা মেদ কমাও, ডায়েড করো।

কিন্তু, এ মেদ কমাতে গেলেই যে, আহারে সংযমী হতে হবে।

আমি ঘন্টা'র পর ঘন্টা টানা পরিশ্রম করতে পারবো, কিন্তু এক ঘন্টা অ-নাহারে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

.

যাই হোক...

সন্ধায় মায়ের সাথে কথা হচ্ছিল।

কথা বলার ফাঁকে মা রুমের কোনার দিকে ইশারা করলেন।

দেখলাম রুম ভর্তি আসবাবপত্র, তার চারপাশে পড়ে আছে বিভিন্ন রকমের ডামবেল, ট্রেডমেইল, স্টেশনারি বাই-সাইকেল, রুলার ইত্যাদি।

প্রথম দিক দিয়ে যন্ত্রগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হলেও, বউয়ের পুরুষ মানুষি আচরণে যন্ত্রগুলোর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলাম আমি।

কেন জানি মনে হলো, এ যন্ত্রগুলোর সাহায্যেই তার আচরণে এতো পরিবর্তন।

.

রাতে আমাদের ঘরে রান্না হয়না।

এ রীতি নাকি বিয়ের পর থেকে শুরু হয়েছে।

সবাই চিড়া মুড়ি কলা, অথবা ফলমূল খেয়ে থাকে।

সকালে আটার রুটি আর চা।

দুপুরে ডিম অথবা মাছ তরকারি আর ভাত।

আর সবার খাওয়া নির্দিষ্ট এবং রুটিন মাফিক।

.

প্রথম দিকে মা মনে করতেন, সংসারে বুঝি একটা আধুনিকা লক্ষী মেয়ে এলো।

সংসারে ব্যয় কমানোর কতো আগ্রহ মেয়েটার।

এ যুগে এমন লক্ষী মেয়ে জুটে !

খুব আদর পেতে লাগলো সে মায়ের কাছ থেকে।

তিন চার মাস ধরে চললো এমন নিয়ম।

মিত্যবয়ি বলে মাসিক খরচের টাকা চলে আসলো তার হাতে।

বউয়ের তো খুশির অন্ত নেই।

সেই পরিবারে হর্তাকর্তা।

.

তিন মাস পরে দেখলাম মা আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কল করে।

বউয়ের নামে নানা অভিযোগ শুনায়।

প্রথম দিক দিয়ে কতো লক্ষী ছিল মেয়েটা।

চাল, তেল, লবণ, বাজার খরচ কম কম লাগতো।

আর এখন!

প্রতিদিন তিন হালি কলা, দুই হালি দেশি মুরগীর ডিম, এক কেজি দুধ, আপেল কমলা, আঙুর ইত্যাদি কিনে আনে।

যা আমার চাল খরচের চেয়ে বেশি।

আবার শুনলাম শরির শক্ত করার মেশিনও নাকি সে কিনবে!

আর, এসব না খেলে নাকি তার শরির শক্ত হবেনা।

.

অবাক হয়ে গেলাম সব শুনে।

কি বলে মা!

এ কি বাঙালি নারীর বৈশিষ্ট্য?

বাঙালী নারীদের থাকবে ভরপুর শরির, হাত ভর্তা চুড়ি, কানের দুল, পায়ের নূপুর ইত্যাদি।

বললাম, তাকে যা খুশি করতে দাও।

আমি বাড়িতে আসি।

তারপর এসব নিয়ে বসবো।

.

বাড়িতে এসে দেখি সবই বাস্তব।

শত রকম নিয়ম কানুন।

অাদেশ উপদেশ।

আমার জন্যও ডায়েড আর মেদ কমানোর নির্দেশনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ছোটবেলা থেকেই ভোজন রসিক আমাকে, রাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে খেঁজুর, ফলের বাটি।

মেজাজটা গরম হয়ে গেল আমার।

দিনশেষে তার ক্লান্ত শরিরটা যেখানে বিছানায় এলিয়ে দেওয়ার কথা, সেখানে সে এলিয়ে দিয়েছে বাইসাইকেলের উপর।

.

জিজ্ঞেস করলাম "তোমার এ অদ্ভুত পরিবর্তন শীলতা তুমি কি টের পাও?

---- হুমম, পাবো না কেন! (উত্তর কররো সে)

---- নিজেকে কেমন লাগে দেখতে?

--- কেন! ভালোই তো।

--- আমার কেন জানি দেখতে ভালো লাগেনা, তোমাকে বাঙালী নারীদের মতো দেখায় না।

বাঙালী ঘরে একজন নববধূ ভিন্ন সংস্কৃতির হবে এটা মানায় বলো?

--- ছিঃ ছিঃ তুমি না ইউরোপ কান্ট্রিতে ছিলে!

কোনটা ভালো কোনটা মন্দ এখনো বুঝোনা?

তোমাকে অামি অনেক আধুনিক ভেবেছিলাম।

আসলে, তোমার মা আর তুমি দু-জনের দৃষ্টিভঙি ই জঘন্য।

আমি তোমাদের'কে দেহপ্রদর্শনের জন্য বিয়ে করিনি।

--- তুমি কি বলতে চাচ্ছো, বাঙালী নারীরা দেহ প্রদর্শনের জন্য বিয়ে করে?(আমি)

---- এই! আমি এটা বলছি.?

(শুরু হলো তুমুল ঝগড়া)

একের পর এক কথা কাটাকাটি।

.

কিন্তু, আমি কি আর সেই প্রভাবশালী ভাব গম্ভীর আধুনিকা নারীর সাথে তর্ক করে পারি!

রণক্ষেত্রে পরাজয় ঘটলো আমার।

আমার সাময়িক পরাজয় ঘটলেও সে হয়তো তার ভুল বুঝতে পেরেছে, এমন মনে হলো ভাবভঙ্গি দেখে।

.

রাত ১২: ১৬।

আমি বসে বসে ফেসবুকিং করছি।

সে দেখি জিম বাদ দিয়ে, সাজসয্যায় ভরপুর, আমার সামনে দিয়ে ঘোর ঘোর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

দরজার সামনে যায় আর আসে।

মনে হচ্ছে এক্ষুনি কোথাও বেরিয়ে পড়বে।

এমন তাড়া।

বুঝলাম, সবই আমাকে আকৃষ্ট করার ফন্দি।

.

সে বারবার গলায় জোরে শব্দ করছে।

যেন তার দিকে তাকাই।

তার দিকে তাকানোর আগে, আহত মনে কয়েকবার দরজার চৌকাঠের দিকে তাকালাম।

কারন, তার দিকে তাকানো আর পর্দা ঝুলানো চৌ'কাঠের দিকে তাকানো আমার কাছে একই মনে হয়।

.

লেখা: শরীফুল ইসলাম

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।