- ওই তোর বাসর ঘরে আসতে এত দেরি হলো কেনো?? (রিধি)
রিহানঃ বাসর রাতে বউয়ের এমন তুই-তুকারী শুনে রীতিমত চমকে উঠলাম!! শুনেছিলাম বাসর ঘরে বউয়েরা নাকি লজ্জায় স্বামীর সাথে কথাও বলতে পারে নাহ। তাই ভাবছিলাম আজকে বিড়ালটাকে মেরে বউকে সারাজীবন পায়ের তলায় রাখবো। কিন্তু এখানে তোহ দেখি সম্পূর্ন ভিন্ন। মনে হচ্ছে আমি যেনো আমার ক্লাসম্যাটকে বিয়ে করেছি। ফলশ্রুতিতে আমাকে এমন তুইতুকারী শুনতে হচ্ছে!! গার্লফ্রেন্ড হলেও মানা যেতো। আমার আসতে দেরি হওয়ার কারণে হয়তো রাগে তুই করে বলছে। কিন্তু তাতো একদমই নাহ!! আমার স্কুল জীবনে, কলেজ জীবনেও কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো নাহ। আমি শুধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের আসা যাওয়া লক্ষ করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। আর সুন্দরী মেয়ে দেখলে মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ে বলতাম আল্লাহ এমন একটা বউ আমারে দিও!! তাছাড়া সারাদিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘোরাঘুরি, আড্ডা দেওয়া, রাত করে বাড়ি ফেরা, মাঝে মাঝেই ৩-৪ দিনের জন্য সব বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়া, এসব যেনো ছিলো আমার নিত্য দিনের কার্যক্রম। তবে বাজে কোনো স্বভাব বা নেশা কিছুই করতাম নাহ!! তাই তোহ বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেছি। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত একবারও দেখি নি!! শুধু নামটা জানি.. ইসরাতুন রিধি। মা কে বলছিলাম "তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ"। কিন্তু মা যে আমার জন্য এমন ডাইনি একটা মেয়েকে এনে দিলো, যে বাসর রাতেই স্বামীকে তুই করে বলছে তা আমার কল্পনারও বাহিরে ছিলো।
রিহানঃ দরজা সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপরোক্ত কথা গুলো ভাবছিলাম কিন্তু এবার বউ আমার সামনে যেটা যেই হুকুম পেশ করলো তা আমার দ্বারা মানা প্রায় অসম্ভব বলা চলে!! আমাকে বললো,,,
রিধিঃ কিরে এখনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কি ভাবিস??
রিহানঃ কো কো কোথায়? কিছু ভাবি নাহ তোহ!!
রিধিঃ তুই নাকি বিয়ের আগে কোনোদিনও 12 টার আগে বাসায় আসতি নাহ??
রিহানঃ হাহাহাহা.. একবারে মিথ্যা কথা!! কে আপনাকে বলছে এসব?? আমি একদমই এমন নাহ! (বোকাচন্দ্রের মতো ফকলা একটা হাসি দিয়ে)
রিধিঃ মা বলছে। আর শুন এখন থেকে আর রাত 10 টার পরে তোর আর বাহিরে থাকা হবে নাহ!!
রিহানঃ হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. আমিও তোহ সেটাই বলি। জানেন আমি নাহ শুনেছি.. যারা রাত করে বাড়ি ফেরে, তারা নাকি সব ধান্দাবাজ. চালবাজ, চিটার, বাটপার!! ( বউয়ের কাছে ভালো হওয়ার একটু প্রচেষ্টা)
রিধিঃ হয়ছে.. থাক!! নিজেই নিজের নামে দুর্নাম করস, লজ্জা লাগে নাহ??
রিহানঃ ইশরে ধরা খেয়ে গেলাম। আমি দরজা লাগিয়ে ভিতরে গিয়ে খাটে বসলাম কিন্তু বউ এখনো নিজের ঘোমটা তুলে নাই। তাই তার চেহারাটা এখনো দেখার ভাগ্য হয় নি। বউয়ের ঘোমটা তুলতে যাবো তার আগেই বউ নিজেকে কিছুটা পিছে নিয়ে গিয়ে আমাকে বললো,,,
রিধিঃ দেখ আমাদের বিয়ে হয়েছে বলে কিন্তু তুই যখন তখন আমাকে ছুঁতে পারবি নাহ.. বলে দিলাম। আমার যখন মন চাইবে, তখন আমি নিজ থেকেই তোর কাছে যাবো।
রিহানঃ কি তখন থেকে তুই তুই শুরু করছেন?? বাবা-মা কি এই টুকুও শিক্ষা দেই নি, কিভাবে স্বামীকে সম্মান করতে হয়??
রিহানঃ আমি একটু ধমকের স্বরে বললাম, যদি কাজে লাগে। আসলে বউ শাসনে নাহ রাখলে মাথায় উঠে যাবে। তখন আমাকে তার কথা মতই ঘুরাবে। বউ আমার ধমক খেয়ে নীরবতা পালন করছে। মনে হয়.. বউ আমাকে ভয় পেয়ে গেছে। নাহলে চুপ করে থাকার কথা নাহ। কিন্তু এক মিনিট নীরবতা কাটিয়ে বউ যেটা করলো তা কারোই প্রত্যাশা করার মতো নাহ। বউ নিজেই নিজের ঘোমটা তুলে কোমরে পেছিয়ে নিয়ে সরাসরি আমার কলার চেপে ধরে, দাঁতে দাঁত কেলিয়ে বলতে লাগলো,,,
রিধিঃ তুই আমার ব্যপারে জানিস নাহ। আমি কলেজ জীবনের এত পরিমাণ ছেলে পিটিয়েছি যে, তুই কল্পনাও করতে পারবি নাহ। কি ভাবছিস বাসর রাতে বিড়াল মারবি?? দাঁড়া তোর বিড়াল মারা বের করছি!!
রিহানঃ কথা শেষ হতেই ধাপধূপ মারামারি শুরু হয়ে গেলো। রিধি আমার বুক, পেট সব কিছু ঘুষি মেরে গুলিয়ে দিতে লাগলো। ঘুষির ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, এই মেয়ে যেনো কারাটের ব্ল্যাক বেল্ট চ্যাম্পিয়ন। ঘুষি খাচ্ছিলাম আর মনে মনে আম্মুকে বকতে ছিলাম। আজ যদি প্রেম করে বিয়ে করতাম.. তাহলে এই দিন আর আমাকে দেখতে হতো নাহ। কোনো মতে নিজেকে ছাড়িয়ে দরজার কাছে দৌড়ে গিয়ে রিধির দিকে ফিরে বললাম,,,
রিহানঃ আফা গো.. আমারে মাফ কইরা দেন। আমি কোনো বিড়াল মারমু নাহ। আমি কেনো আমার বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্টির কেউ এখন থেকে বিড়াল মারবো নাহ। আর মারতে চাইলেও আমি যাইয়া বাধা দিমু। তাও আমারে মাফ কইরা দেন।
রিহানঃ আমার এই দুর্দশা দেখে রিধি যেনো অট্ট হাসিতেতে হেলে পড়লো। কিন্তু আবার কি যেনো মনে করে আমার দিকে রাগী চোখের লাল বর্ন ধারণ করে তাকিয়ে বললো,,,,
রিধিঃ এই তুই আপা বললি কারে?? আজকে তুই শেষ!!
রিধিঃ বলেই আমি বিছানা থেকে উঠতে যাবো, তার আগেই রিহান আবার বলল,,,
রিহানঃ নাহ.. নাহ.. কোনো আপা নাহ। বউ, আমি আপনার বউ। থুক্কু.. কি কই এসব!! আপনি আমার বউ, আমার লক্ষী বউ।
রিহানঃ আমার এমন দশা দেখে বউয়ের মুখে আবারো হাসির প্রতিচ্ছবি। আমি বলদ বলে বউ হয়তো বিষয়টা খুব এনজয় করছে। কিন্তু এতক্ষন পর লক্ষ করলাম বউ আমার যথেষ্ট লেভেল এর সুন্দরী। হাসলে যেনো মনে হয় মুক্ত ঝড়ছে। কিন্তু বউয়ের রাগ দেখে তোহ মনে হয় হিটলার এর খালা। বউ এবার নিজের হাত তুলে আমাকে নিজের দিকে ডাকতে লাগলো। বউয়ের হাতের ইশারা পেয়ে বিছানার দিকে যেতে লাগলাম। বিছানায় বসতেই বউ আমার এলোমেলো হয়ে থাকা পাঞ্জাবী ঠিক করে দিতে লাগলো। সাথে আমার কলার টাও, সাথে মুখ ফুটে আবার সেই আওয়াজ... কিন্তু এবার কোনো তুই নাহ! সরাসরি তুমি.. তাও আবার কিহ মধুর স্বরে,,,
রিধিঃ খুব ব্যথা পাইছো বাবু?? আহারে কতই নাহ ব্যথা পাইছে আমার জানটা। এবার যাও এই পাঞ্জাবীটা খুলে আসো। ঘুমাবো, খুব ঘুম পাচ্ছে।
রিহানঃ আচ্ছা.. আমি তাহলে ওয়াশরুম থেকে খুলে আসি।
রিহানঃ বলে বিছানা থেকে উঠে ওয়াসরুমের দিকে যেতে নিবো, তখনই বউ এর ভয়ঙ্কর হুঙ্কার,,,,,
রিধিঃ এই দাঁড়া কোথায় যাস? এখানেই দাঁড়িয়ে আমার সামনে পাঞ্জাবী চেঞ্জ করবি।
রিহানঃ কিহ? নাহ.. নাহ.. আপনি সব দেখে ফেলবেন।
রিধিঃ তাতে কি?? আমি তোহ তোমার বউ। আমি তোহ একদিন সবই দেখবো।
রিহানঃ নাহ.. নাহ.. আমি পারবো নাহ।
রিধিঃ খুল.. তাড়াতাড়ি।
রিহানঃ বউয়ের কন্ঠে কেমন জানি ডিপজল ডিপজল ঘ্রাণ পাচ্ছি। কারণ এগুলো তোহ ডিপজলের সেই বিখ্যাত পবিত্র বাণী। যা আমার 5 বছরের ছোটো ভাইও জানে। কিন্তু ভয় করছে ডিপজল যেভাবে অন্যদের পেছনে মারতো, বউ যদি আমার সাথে এমন করে তাহলে তোহ কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। সমাজে মুখ দেখাতে পারবো নাহ। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে, বউয়ের কথা মত পাঞ্জাবী খুলতে লাগলাম। আর এদিকে বউ আমার পাঞ্জাবী খোলার দিকে তৃক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে.. এই বুঝি আমাকে গিলে ফেলবে। পাঞ্জাবী খুলে ফেললাম। এখন আমার গায়ে একটা সেন্ডো গেঞ্জি আর নিচে জিন্স প্যান্ট। আমাকে দেখতে পুরাই ভাদাইমা ভাদাইমা লাগছে। এবার বউ বললো,,,
রিধিঃ যাও.. এবার একটা লুঙ্গি পড়ে আসো।
রিহানঃ নাহ.. নাহ.. আমি এটা করতে পারবো নাহ!! আর এমনিতেও আমি লুঙ্গি পড়ি নাহ। লুঙ্গি পড়ে ঘুমালে পরের দিন সেটাকে গলায় পাই মালা হিসেবে। মনে হয়.. কেউ যেনো আমায় বরণ করে নিয়েছে।
রিধিঃ হাহাহাহা.. সত্যি? ঠিক আছে তাহলে আসো লুঙ্গি পড়তে হবে নাহ। এভাবেই ঘুমাও।
রিহানঃ আমি বিছানায় উঠলাম। এবার রিধি ওয়াশরুমে গেলো শাড়ি পাল্টাবে বলে। আর এত মোটা শাড়ি পরে থাকলে তোহ ঘুমাতেই পারবে নাহ। আমারো মন চাচ্ছিলো বলতে "যে আপনিও আমার সামনে শাড়ি পাল্টান"। কিন্তু ভয় লাগে যদি আবার আগের মতো মারা শুরু করে। রিধি শাড়ি পাল্টে চলে আসলো, একটা পাতলা সূতির শাড়ি পড়ে। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। রিধি এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্রথমে ভেবেছিলাম মাঝখানে হয়তো বালিশ দিবে কিন্তু নাহ বালিশ তোহ দেয় নি, উল্টো আমার শরীরের সাথে চেপে শুয়ে আছে। রিধি ভেবেছিল আমি হয়তো ঘুমিয়ে গেছি কিন্তু নাহ আমি শুধু চোখ বন্ধ করে রেখেছি। কিন্তু চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে একসময় সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙল বুকের উপর চাপের কারণে। মনে হচ্ছে.. বুকে যেনো কেউ বসে আছে। এমনিতেই ভূতের ভয় আমার মনে সেই ছোট্ট থেকে। মা বলতো রাতে নাকি বোবা এসে চেপে ধরে। তাতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এমন কি অনেক মানুষ মারাও যায়। তাড়াতাড়ি করে চোখ খুলে দেখি রিধি হাত-পা চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে, আমার উপরে উঠে ঘুমাচ্ছে। আর এই রুমে কোনো ভূত তুত নেই, রিধির এক পা আমার বুকে উপর। রিধির ঘুমের এমন ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এই রুম টা যেনো ওর বাপের আর এই বিছানায়টা ওর বাবা ওকে দিয়েছে, এইভাবে শুয়ে থাকার জন্য। যদিও এখন থেকে এই ঘরটা ওরও কিন্তু আমার গায়ে পা তুলে দেওয়ার সাহস কি ভাবে হয়। ভাবলাম এই তোহ সুযোগ, এই মেয়েটাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ইচ্ছে মতো বকি। আমি রিধির শরীর ধরে ঝাকাচ্ছি আর ডাকছি। কিন্তু এ যেনো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। অনেকক্ষণ পর যখন জাগনা পেলো, তখন উঠেই আমাকে আবার মারতে লাগলো। যেখানে আমার ওকে বকা দেয়ার কথা সেখানে রিধি আমাকে মারছে। বাসর রাতে পরপর দুইবার মার খেলাম। এই জীবন তোহ পকেটে রাখা ছাড়া উপায় নেই। তবুও আমি কোনো মতে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে বললাম,,,
রিহানঃ আরে মারছো কেনো আগে সেটা বলো তোহ??
রিধিঃ এইসব করে আবার ন্যাকা সাঁজা হচ্ছে??
রিহানঃ আমি আবার কি করলাম??
রিধিঃ তোমায় বলেছিলাম নাহ, তুমি আমাকে ছুঁতে পারবে নাহ। আমি ঘুমানো অবস্থায় নাহ জানি আমার সাথে আরো কি কি করেছো?? সত্যি করে বল.. তুই কি কি করেছিস??
রিহানঃ আরে কিছুই করি নি। ঘুমানোর সময় তোমার পা আমার বুকের উপর উঠেছিলো আর সেটাই বলতে তোমায় ডেকেছি।
রিধিঃ রিহানের কথা শুনে আমি কিছুটা লজ্জা পেলাম। লজ্জায় আমার মুখটা লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছে। আমি যে কখন কি করে, তা আমি নিজেও জামি নাহ!! আমি আবার ঠিক করে, এইবার একটু দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লাম।
রিহানঃ আমরা দুইজনই নিজেকে আবার ঠিক করে শুয়ে পড়লাম। আমার আবার একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস কিন্তু ভাবছি কাল খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। নাহলে আবার ভাই-ভাবি, বন্ধুরা ভাববে কাল রাতে সাপ খেলা হয়েছিল। আর তাই হয় তোহ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে। তাই আমিও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, কাউকে এই কথা বলার সুযোগ দেওয়া যাবে নাহ। যে করেই হোক নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে হবে।
রিহানঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিছানায় শুধু আমি একা। তার মানে রিধি আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। ওকে ডাকছি কিন্তু কিছুতেই কোনো উত্তর পাচ্ছি নাহ। তাই আমি আর নাহ ডেকে বাথরুমে চলে গেলাম, ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে যেই বের হবো অমনি দরজায় কার সাথে যেনো ধাক্কা খেলাম। আমি ঠিক থাকলেও, যে আমার সাথে ধাক্কা খেয়েছে সে ঠিক নেই। রিধি মাটিতে পড়ে গেছে। কিন্তু ও পরে যাওয়ার আগেই ওর হাতের গরম চা আমার গায়ে পড়ে গেছে। এমনিতেই এটা গরমের মৌসুম তার উপর গরম চা গায়ে পড়েছে। শরীর যেনো আমার পুড়ে যাচ্ছে। তাই আমি দৌড়ে আবার বাথরুমে ঢুকলাম। শরীর ঘামছে খুব, ভাবলাম গোসল করে নিলে মন্দ হয় নাহ। ভালোভাবে গোসল করে বের হলাম। চুলগুলো এখন ভিজে আছে। একটু পানি থাকলে তাও এই গরমে একটু স্বস্তি পাওয়া যাবে। গোসল করে বাসা থেকে একটু বাইরে হাঁটতে বের হয়ছি, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি, আননন নাম্বার থেকে কল আসছে। ফোন টা রিসিভ করে বললাম,,,
রিহানঃ হ্যালো.. কে বলছেন??
রিধিঃ আমি রিধি!!
রিহানঃ কিহ? কিসের ফাঁড়া?? হো আপা আমার জীবনে এমনিতেই অনেক ফাঁড়া!! আপনি কি কবিরাজ?? আমারে কি পাথর দিবেন?
রিধিঃ হারামজাদা.. আমি তোর বউ। তুই সাত সকালে কই গেছস?? তোর হাড্ডি-গুড্ডি কিন্তু গুঁড়ো করে ফেলমু। তাড়াতাড়ি বাসায় আয়, মা খাবার নিয়ে বসে আছে।
রিহানঃ হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. আমি আসছি।
রিহানঃ বউয়ের মুখের এমন ভয়ানক হুমকি শুনে আমি প্রায় থমকে গেছি। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আমার কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে।তাড়াতাড়ি করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। আল্লাহ্ ভয় লাগছে। বউ আমারে কথায় কথায় মারতে চায়। আল্লাহ্.. তুমি আমারে উঠায় নেও। এই কেমন বউ দিলা, বলতে বলতে বাসায় আসলাম। আমাকে এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে দেখে আম্মু তোহ একদমই অবাক। তাই আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,,,
আম্মুঃ কিরে তুই তোহ বাহিরে গেলে 2-3 ঘণ্টার আগে বাসায় আসিস নাহ!! আজ মাত্র 30 মিনিট এই কিভাবে আসলি?? তোর শরীর খারাপ করে নি তোহ।
রিহানঃ যেই জল্লাদের সাথে বিয়ে দিছো বাসায় নাহ এসে উপায় আছে। নাহ জানি আজকে আবার কি করে। (মনে মনে বললাম)
রিহানঃ নাহ.. নাহ.. আম্মু। এখন বিয়ে করেছি, তাই বাহিরে থাকলে তোহ মানুষ খারাপ বলবে। এই জন্য তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।
আম্মুঃ এইতো আমার লক্ষী ছেলের মত কথা।
রিহানঃ আম্মু সাথে কথা বলতে নাহ বলতেই দেখি মার পিছে রিধি এসে পড়েছে। আমি ভয় ভয় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। রিধি বললো,,,
রিধিঃ মা.. আপনি খাবার টেবিল গিয়ে বসুন। খাবার দেওয়া আছে, আমি একটু ওনার সাথে কথা বলে আসছি।
আম্মুঃ দেখেছিস বাবা.. কতো লক্ষি একটা মেয়েকে তোর বউ করে এনেছি।
রিহানঃ বলে মা চলে গেলো। আমি মনে মনে বলছি, “কচুর লক্ষী!! বাসর রাতের কান্ড দেখলে তুমিও লেজ গুটিয়ে পালাতে। আর তোমার সামনে আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করল কিন্তু আমাকে তুই ছাড়া ভুলেও একবার তুমি ডাকে নাহ। এই বজ্জাত মেয়ে আবার লক্ষী হয় কি করে। (মনে মনে বললাম)
রিহানঃ রিধি আসতে আসতে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমি ভয়ে পিছে যাচ্ছি, এই বুঝি মার শুরু করে দেয়। এখন তোহ চিৎকারও করতে পারবো নাহ, পাশের রুমেই আব্বু-আম্মু। তাই প্রতিশ্রুতি নিলাম যতো মাইরই হোক নাহ কেনো মুখ বুজে থাকতে হবে। একটু পর রিধি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিন্তু মাইর দেওয়ার জন্য নাহ!! হ্যাঁ.. আপনারা যা ভাবছেন তাই হয়েছে। আমাকে ইচ্ছে মতো খেয়ে দিলো। হয়ত এর জন্যই আমাকে ফোন দিয়ে ডেকেছে। তবে আমার কাছে এই শাস্তিটা খুব ভালো লেগেছে। তবে শরীরের অবস্থা খুব খারাপ, গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি খাবার টেবিল এর দিকে। আমার এই অবস্থা দেখে আম্মু বললো,,,
আম্মুঃ কিরে তোর আবার কি হলো?? বাহিরে থেকে আসলি একদম ঠিকঠাক আর রুম থেকে বের হচ্ছিস একদম ভিজে বিড়াল এর মতো। মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে যাচ্ছিস!!
রিহানঃ কি করে যে তোমাকে বুঝাই, একটু আগে কি রোমান্টিক একটা শাস্তি পেলাম। (মনে মনে)
রিহানঃ আম্মুর এমন বিদঘুটে প্রশ্ন করা দেখে, আব্বু আম্মুকে কনুই দিয়ে একটা ঘুতা দিলো। আম্মু কিছুটা কেশে উঠে, এহেম এহেম করছে। যেটা দেখে আমার রাগী বউ মারাত্মক লেভেল এর একটা লজ্জা পেলো।
রিধিঃ মা.. আমার কিছু কাজ আছে। কাজগুলো সেরে এসে আমি খাবো। তোমরা খেয়ে নাও।
রিহানঃ বলে চলে গেলো.. আমিও নিজের মত খেয়ে নিলাম। একটু আগের শাস্তিটার জন্য শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম একটু শুয়ে রেস্ট নেই। তাই শুয়ে পড়লাম কিন্তু শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম, টেরও পেলাম নাহ। আমি স্বপ্নে দেখি পানির উপর শুয়ে আছি। চারদিকে গরম তার উপর এমন ঠান্ডা পানির স্বপ্ন!! আহা কি মধুর অনুভূতি। মনে হচ্ছে.. আমি সত্যি সত্যি পানির উপর শুয়ে আছি। তখন কানে কারো বিশাল গলার চিৎকার এর আওয়াজ পড়লো। ধরফরিয়ে উঠে দেখি পাশে রিধি আর হাতে ছোটো একটা বালতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তৎক্ষণাৎ বিছানার দিকে তাকালাম, যা হবার হয়ে গেছে। এতক্ষন আমি কোনো পানির স্বপ্ন দেখি নাই, রিধি আমার গায়ে পানি ঢেলে দিছে।
রিহানঃ ওইই.. তুমি আমার উপরে পানি দিলে কেনো??
রিধিঃ আমার ইচ্ছে হয়ছে, তাই দিছি।
রিহানঃ তোমার ইচ্ছে হলেই, তুমি আমাকে মারো। ইচ্ছে হলেই, আমার সাথে রোমাঞ্চ করো। আবার ইচ্ছে হলেই আমার গায়ে পানি ঢেলে দেও। হুহ.. আমাকে কেউ ভালোবাসে নাহ। (মলিন করে)
রিধিঃ হি হি হি..!! কুত্তা.. আমি তোকে খুব খুব ভালোবাসি।
রিধিঃ আমি রিহানকে জড়িয়ে ধরে কথাটা বললাম।
রিহানঃ হুম.. আমি জানি তোহ!! আমার পাগলীটা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
রিধিঃ রিহান!!
রিহানঃ হুমমম.. বলো, বাবু??
রিধিঃ সারাজীবন এভাবে আমাকে ভালোবাসবা তোহ??
রিহানঃ হুমমমমমম। আমার এই পাগলীটাকে কখনো কষ্ট দিবো নাহ । সারাজীবন আমার বুকে এই পাগলীটাকে আগলে রাখবো।
রিহানঃ উমমমম্মাহ্..!! ( রিধির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলাম। তারপরে বিছানা থেকে উঠে, ফ্রেস হয়ে, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করলাম।
রাতের বেলা....
রিহানঃ আমার রাগী মিষ্টি বউটা আয়নার সামনে বসে চুল বিনী করছে। কিহ যে কিউট লাগছে!! একেবারে ছোট বাচ্চাদের মতো। আমার মাথায় হঠাৎ দুষ্টুমির ভূত চাপলো। তাই পিছন থেকে গিয়ে শক্ত করে কোমরে জড়িয়ে ধরলাম।
রিধিঃ ওইই.. দুষ্টু!! হঠাৎ কি হল আবার??
রিহানঃ সামনে এই রকম একটা পরির মতো বউ থাকলে, সব স্বামীরা একটু রোমান্টিক হয়ে যায়।
রিধিঃ হুমমম.. হয়ছে পাম দিতে হবে নাহ।
রিহানঃ সত্যি.. বলছি, তোমাকে একদম পিচ্চি পরীর মতো লাগছে।
রিহানঃ বলেই আমি রিধির কপালে আলতো করে আমার ঠোঁট জোড়া ছুয়ে দিলাম।
রিধিঃ ওইইই.. একদম দুষ্টুমি করার চেষ্টা করবে নাহ।
রিধিঃ আমি রিহানকে ধাক্কা আমার কাছ দূরে সরিয়ে দিয়ে কথাটা বললাম।
রিহানঃ কিচ্ছু করবো নাহ!! জাষ্ট.. একটু রোমাঞ্চ করবো।
রিধিঃ একদম নাহ বলে দিলাম!!
রিহানঃ রিধির গাল দুইটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
রিহানঃ একশো বার করবো!!
রিহানঃ এই বলে, রিধির আর আমার ঠোঁট এক করে দিলাম। প্রায় ৫ মিনিট পর ছাড়লাম। দুজনেই এক সাথে হাপাচ্ছি!! তারপর যা হলো সেটা আর বলা যাবে নাহ। পাঠক-পাঠিকারা আমি আর আমার বউ এখন রোমাঞ্চ করছি, আর সেটা আপনাদের দেখার দরকার নাই।
(Friday Special)
Written By Nihan Hossain NeeL..!!
Comments (0)