Search

রম্যগল্পঃ চালাক

  • Share this:

ফ্রেন্ডলিস্টের এক ভাই বৃষ্টির ছবি দিয়ে পোস্ট করলো, "যদি তুমি বৃষ্টি হতে!"

অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম পোস্টটার দিকে৷ আহা কত রোমান্টিক। কত সুন্দর লেখনী।

পাশে এক ফ্রেন্ড ছিল। আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও একটু উঁকি মেরে দেখলো আমার ফোনের স্ক্রিন। পোস্টটা দেখে আমি যতটা অবাক হয়েছিলাম ও ঠিক ততটাই হেসে ফেললো।

আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, হাসছিস কেন?

বললো, এই লোক কাকে বৃষ্টি হতে বলেছে?

বললাম, হয়তো ওনার এক্স কে। নয়তো ওনার ওয়াইফকে আর নয়তো ওনার গার্লফ্রেন্ডকে। এ প্রশ্ন কেন? আর এতে হাসার কী আছে?

ও বললো, সালা এখনও বুঝলি না কেন বৃষ্টি হতে বলেছে!

আমি মাথা নেড়ে বললাম, না তো। কেন?

ও একটা হাসি দিয়ে বললো, বৃষ্টি কয়টা পড়ে?

আমি প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। জিজ্ঞেস করলাম এ কেমন প্রশ্ন?

ও বললো, আহা বল না কতগুলো বৃষ্টি পড়ে?

আমি বললাম, বৃষ্টি তো গোনা যায় না। অগণিত।

ও বললো, এবার বুঝে নে ঐ ব্যক্তি নিজেও চায় ওনার অগনিত গার্লফ্রেন্ড হোক। শোন বন্ধু একটু চালাক না হলে দুনিয়ায় টেকা বড়ো মুশকিল।

আমি মনে মনে ভাবলাম কথা তো আসলেই সত্যি। তার মানে যেই ভাই পোস্ট করেছিলেন তার চরিত্র খারাপ। অথবা বদ মতলব আছে নিশ্চয়ই।

বব্ধুকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বাসায় চলে এলাম।

বাসায় এসে হাত মুখ ধুয়ে একটু মুড়ি খাচ্ছিলাম হঠাৎ টুং করে আমার গার্লফ্রেন্ডের মেসেজ আসলো। রাত তখন আনুমানিক সাড়ে দশটা। বিকেলে বৃষ্টি পড়ায় আকাশ অনেক পরিষ্কার হয়ে আছে। তারা দেখা যাচ্ছিল অনেক। আমি বেলকনিতে বসে আমার প্রেমিকার মেসেজ ওপেন করলাম। কত সুন্দর করে আমার প্রেমিকা লিখেছে,

প্রিয় তুমি যদি তারা হতে আর আমি চাঁদ

তোমার আমার প্রেমে রইতো কত স্বাদ!

আমার প্রেমিকা বাংলা বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করে। এরকম চটপট কবিতা বানানোয় ওস্তাদ। মনটা খুশিতে ভরে গেল কবিতা দেখে। তারার দিকে তাকালাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম আকাশে একটা দুইটা না অনেক তারা। বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। আমার হাত কাঁপছে। শেষমেশ আমার প্রেমিকাও আমাকে ধোঁকা দিল?

না এ হতে পারে না। আমি তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করলাম, আমি তারা হবো মানে? কয়টা তারা আছে তোমার এমন?

মেসেজ সিন হয়েছে দেখলাম৷ বোঝাই যাচ্ছে আমার প্রেমিকা বারবার রিপ্লাইতে মেসেজ লিখছে আর কেঁটে দিচ্ছে সেন্ড আর করছে না। সন্দেহ বাড়তে থাকলো। আমার হার্ট তখন ১৮০ তে চলছিল। কাঁদো কাঁদো অবস্থা! পাঁচ বছরের রিলেশন। এটা করতে পারলো ও?

বুকে বাজলো না একটুও?

আমি যখন প্রায় কেঁদে দেব তখন মেসেজ দিল ও। ওপেন করে দেখি লেখা,

কীসব আজেবাজে বকছো?

তুমি কি টিভির টক-শো?

আশ্চর্য এই সময়েও আমার প্রেমিকা কবিতা লিখছে!

আবার বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। টক-শো তো একটা হয় না। অনেকগুলো হয়৷ এবার কেঁদেই দিলাম আমি। মেসেজ করলাম, এমন আর কয়টা টক-শোতে তুমি গেছো?

এবার রিপ্লাই তাড়াতাড়ি এলো। ও জিজ্ঞেস করেছে, নেশা টেশা করেছো তুমি?

লিখলাম, আমার কথার জবাব দাও!

ও লিখলো, কি জবাব দেবো? তোমার মতো আর তারা কে হবে? আর আমি কেন টক-শো তে যাবো? ওটা তো এমনি রোমান্টিক ভাবে লিখেছি৷

আমি বিশ্বাস করলাম না। তুমুল ঝগড়ার পরে আমাকে ব্লক মেরে রেখে দিল। মনের মধ্যে আড়াইশ পাউণ্ডের একটা পাথর জমে রইলো। আজকে বন্ধু না বললে হয়তো এই রিলেশন অনেক দূরে যেত। আরও কষ্ট পেতে হতো।

বন্ধুকে একটা কল দিলাম।

বন্ধু কল ধরে জিজ্ঞেস করলো, কি রে কি সমস্যা? কিছু হইছে?

বললাম, বন্ধু আজকে তুই না থাকলে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত। তুই ঠিকই বলেছিলি, একটু চালাক না হলে দুনিয়ায় টেকা বড়ো মুশকিল।

 

লেখাঃ বি.এম.পারভেজ রানা

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।