-তুই তো গোয়েন্দা হতে চাস। আমার একটা ছোট্ট কেস সলভ করবি?
হাতে ধরা ছোট আয়না দেখে চুল ঠিক করতে করতে কথাটা বলল তাহি।
মুরাদ বলল,
-তোর বাসায় কেউ খুন হয়েছে নাকি?
তাহি একটা ভেংচি কেটে বলল,
-নিজেকে কি এখন থেকেই বড় গোয়েন্দা ভাবতে শুরু করেছিস? কেউ খুন হলে কি আমি তোর কাছে আসব?
-তা ঠিক বলেছিস। সমস্যাটা কি বল তাহলে?
-তোকে খুঁজে বের করতে হবে সাদিক আমাকে ভালো টালো বাসে কিনা।
-এই কেস তো আমি এক সেকেন্ডেই সলভ করতে পারবো।
-কীভাবে!
মুরাদ তার হাত থেকে আয়না টা নিলো। এরপর তার মুখের সামনে ধরে বলল,
-আরেকটু মনোযোগ দিয়ে নিজের মুখ টা দেখ তো। এরপর নিজেই বল সাদিক তোকে ভালো কিংবা টালো বাসে কিনা।
তাহি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে নিজের চেহারা দেখলো। এরপর মুরাদের ইঙ্গিত টা বুঝতে পেরে ঠাস করে তার গালে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।
গালে হাত রেখে মুরাদ বলল,
-যাহ বাবা! প্রথম কেস সলভ এর পারিশ্রমিক হিসেবে থাপ্পড় পেলাম।
তাহি রেগে বলল,
-তোর মত মাথা মোটা মানুষ কোনদিন গোয়েন্দা হতে পারবে না। আর হলেও কেস পাবি না। দূর হ।
মুরাদ কে দূর হতে বলে তাহি নিজেই চলে গেলো।
- তোর কেস সলভ হয়ে গেছে।
তাহির পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল মুরাদ।
তাহি কিছুটা বিষন্ন গলায় বলল,
-কেস তো তুই আরো এক মাস আগেই সলভ করেছিস।
-আরে সেটা তো মজা করে বলেছিলাম।
-ও।
-শোন, সাদিক পছন্দ করতো আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী রিদিমাকে।
-কিন্তু রিদিমাকে তো ও পাত্তাই দেয় না। ও নিজে থেকে কখনো কথাও বলতে যায় নি।
মুরাদ হাসলো।
-কলেজের প্রায় সব ছেলে যাকে পছন্দ করে, তাকে পটানো আই মিন...
একটা মেয়ের সামনে এভাবে পটানো শব্দটা ব্যবহার করা ঠিক না।
তাহি বলল,
-কথা কন্টিনিউ কর।
-হ্যা.. তাকে সহজ পথে ইম্প্রেস করা যাবে না। ইম্প্রেস করতে হবে উল্টো পথে। যেখানে সবাই তার সাথে কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকে সেখানে কেউ তাকে এড়িয়ে চলছে এটা সে সহ্য করতে পারবে না। আর সে যদি এমন কাউকে প্রায়োরিটি দেয় যাকে ক্লাসের কেউ ভালো মত খেয়ালই করে না, তাহলে তো কথাই নেই।
-মানে?
-মানে সাদিক তোকে বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছে। এটা শুধুমাত্র রিদিমাকে দেখানোর জন্য৷ তুই একটা বিষয় খেয়াল করেছিস, সাদিক তখনই তোর সাথে ভালো ভাবে কথা বলতো, তোর হোমওয়ার্কে সাহায্য করতো যখন আশেপাশে রিদিমা থাকে।
তাহি এই বিষয়টা খেয়াল করে নি। তার মনে পড়লো একবার সে সাদিকের কাছে একটা পড়া বুঝতে পারেনি বলে বুঝতে চেয়েছিলো। সাদিক ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝিয়েছিলো সে এখন ব্যস্ত। পরে বুঝিয়ে দিবে৷ তখন সামনে রিদিমা ছিলো না। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই যখন রিদিমা ক্লাসে ঢুকেছিলো তখনই বলেছিলো, 'তাহি, কোন পড়াটা বুঝতে পারো নি? '
তাহি চুপ করে আছে। মুরাদ বলে চলেছে,
-আর সাদিকের প্লানিংটা যে কিছুটা কাজ করেছে সেটা বুঝা গেলো তার কয়েকদিন দিন পড়েই।
-কীভাবে?
-রিদিমার তোর প্রতি রাগ হতে লাগলো। কেউ একজন তাকে বাদ দিয়ে তোকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে এটা সে সহ্য করতে পারে নি৷ এজন্য অনেকবারই বন্ধুদের সামনে তোকে নিয়ে অনেক কটু কথা বলেছে, তোর লুকস নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে। আগে যেটা করতো না।
তাহি জিজ্ঞেস করলো,
-তাহলে রিদিমাও সাদিককে পছন্দ করতে শুরু করেছে?
-না। রিদিমার অহংকারে বিধেছে বিষয়টা। ও শুধু সাদিককে ওর পিছনে ঘুরাবে। আর কিছু না।
-ও
-কিন্তু এরপর যখন রিদিমা তোর সাথে বাজে ব্যবহার করতে লাগলো সাদিক খেয়াল করে ওর রিদিমার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। আর তোর জন্য খারাপ লাগছে। সেদিন বিরক্তি আর রাগ নিয়ে রিদিমার দিকে তাকাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো ও রিদিমাকে হয়ত থাপ্পড় মেরেই বসবে। ও রিদিমাকে লুকিয়ে আড় চোখে দেখতো, খেয়াল করলাম লুকিয়ে দেখার পরিমাণটা কমে গেলো। রিদিমা বিষয়টা এনজয় করতো। ও খেয়াল করে সাদিক ওর দিকে তাকায় কিনা। এখন সাদিককে না তাকাতে দেখে রিদিমা কিছুটা বিরক্ত হয়। এটা ওর চোখেমুখে প্রায়ই ফুটে উঠে।
তাহি অবাক হয়ে বলল,
-ওর রিদিমার প্রতি রাগ হলো!
-হ্যা। একদিন তো ওকে সরাসরি কথা শুনিয়ে ছিলো। তুই তখন অপমানে সেখান থেকে চলে গিয়েছিলি। আমি ওর তোদের দুইজনের প্রতি তাকানো, ফেসিয়াল এক্সপ্রেসন সব খেয়াল করেছি।
-তারপর কি বুঝলি?
-বুঝলাম ওর তাকানোর ভঙ্গি অদলবদল হচ্ছে। মানে ও তোকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। তুই একদিন কলেজে না আসলে ও ছটফট করে। কয়েকবার অন্যজনকে ভুল করে তাহি ডেকে ফেলেছে। তুই যেই কলমটা কালি শেষ করে ফেলে গেছিলি সেটা ও কুড়িয়ে নিয়েছিলো। মাঝে মাঝে ও খাতার উপরে অবচেতন মনে আঙুল ঘুরাতে থাকে। আমি একবার খেয়াল করলাম ও কি কোনো কিছু লিখে কিনা? একবার ও আঙুল ঘুরিয়ে কি লিখেছিলো জানিস?
-কি?
- T A H I
তাহি কিছুক্ষণ হা করে মুরাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর বলল,
-কিন্তু তুই যে বললি ও রিদিমা কে পছন্দ করে।
-আমি বলেছিলাম ও রিদিমাকে পছন্দ করতো। কিন্তু এখন করে না। একদিন ইচ্ছে করে রিদিমার নামে নেগেটিভ মন্তব্য করলাম। সেদিন ও সাধারণ ভাবেই বলল যে এরকম নেগেটিভ মন্তব্য করা ঠিক না। কিন্তু যেদিন তোকে নিয়ে নেগেটিভ কথা বললাম সেদিন ও আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো। একটা কেস সলভ করতে যেয়ে দুইটা থাপ্পড় খেলাম।
তাহির খুব আনন্দ হচ্ছে। আনন্দিত স্বরে সে বলল,
-কিন্তু ও...
-কিন্তু ও তোর প্রপোজাল ফিরিয়ে দিলো কেনো সেটাই তো?
তাহি অবাক হয়ে বলল,
-আমি প্রপোজ করেছি জানলি কীভাবে?
-তোর মন খারাপ দেখে। আর দুইদিন ধরে তুই সাদিকের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছিস না। তোর লজ্জা আর কিছুটা অপমানিত বোধ হচ্ছে। এড়িয়ে চলছিস ওকে। আরো একটা কারণে এটা বুঝলাম।
-কি কারণ?
-প্রথমবার যখন মজা করে বলেছিলাম ও তোকে পছন্দ করে না এরপরেও তুই কয়েকবার আমাকে বলেছিলি বিষয়টা দেখার জন্য। কিন্তু আজকে যখন নিজে থেকেই বলতে আসলাম তুই তেমন আগ্রহই দেখালি না। কারণ এর রেজাল্ট তুই আগেই পেয়ে গেছিস।
তাহি উচ্ছাসের সাথে বলল,
-এখন এসব রাখ। বল না ও কেন না করলো?
মুরাদ হেসে বলল,
-আজকে কত তারিখ বল তো?
-কত?
-১৪ ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেনটাইন ডে। আমি নিশ্চিত আজকে সাদিক তোকে তার মনের কথা জানাবে দেখিস। তোকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যই হয়ত সে তোর প্রপোজাল এক্সেপ্ট করেনি।
কিছুক্ষণ বাদে সাদিককে দেখা গেলো। হাতে একটা একটা গোলাপ ফুল নিয়ে।
তাহির দিকে গোলাপ ফুল টা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। আর তাহিও লজ্জা লজ্জা মুখ করে ফুলটা নিতে যাচ্ছিলো।
মুরাদ দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। সে সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
-গোলাপ টা কার বাগান থেকে চুরি করে এনেছিস?
সাদিক থতমত খেয়ে বলল,
-চুরি করে আনতে যাবো কেন? কিনে এনেছি কলেজের সামনের দোকান থেকে।
-তোর আনা ফুলটা মূর্ছে গেছে। আর কিছুটা কালোও হয়ে গেছে। সামনের যে দোকানটায় গোলাপ পাওয়া যাচ্ছে সেখানকার ফুলগুলো একদম তাজা। ফুলটা তুই সম্ভবত ভোর বেলায় লুকিয়ে ছিড়ে রেখেছিলি। অন্ধকারে ফুল ছিঁড়তে গিয়ে তোর আঙুলে কাঁটাও বিধেছে। সেটা এখন খেয়াল করলাম। দোকানদার কাঁটা গুলো ছেটে ফুল বিক্রি করছে। আর রাতে চুরি করলে ধরা পড়ার সম্ভাবনাও কম।
মুরাদের কথা গুলো শুনে তাহি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তাহিকে অবাক করে দিয়ে সাদিক বলল,
- তোকেও তো ফুল কিনতে দেখলাম। তুই কার জন্য ফুল কিনছিলি, মুরাদ?
(সমাপ্তি)
অরণী মেঘ
Comments (0)