Search

অপাত্রে ভালোবাসা দান

  • Share this:

নুহাশের পাশে বসে থাকা মেয়েটা বারবার ওর গায়ে ঢলে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে নিতে চাইলেও কেন যেন নিতে পারছিনা। আচমকা দেখলাম মেয়েটা সবার আড়ালে কানে কানে নুহাশকে কিছু বললো। মুহূর্তেই রাগে মুখ লাল হয়ে উঠলো। আমি নুহাশের প্রেমিকা, আমার সামনে আরেকটা মেয়ে ওর কানে কানে কিছু বলার সাহস পায় কী করে? তাও যেখানে আশেপাশে সব বন্ধুরাই আছে। চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

-"এসব কী? তুমি ওর কানে কানে কী বললে?"

-"সেটা আমি আপনাকে বলবো কেন আপু?"

-"আলবাত বলবে। নুহাশ আমার বয়ফ্রেন্ড হয়।"

-"তো? তাই বলে আমি আমার বন্ধুকে কিছু বলতে পারবো না?"

-"অবশ্যই পারবে কিন্তু কানে কানে কেন যখন এখানে উপস্থিত সবাই তোমার আর নুহাশের বন্ধু।"

-"আমার ইচ্ছে, আপনার সমস্যা হলে উঠে যান।"

-"তা তো যাবোই। তোমার স্বভাব চরিত্র আমার জানা হয়ে গেছে এতক্ষণে। নুহাশ এসো তো।"

নুহাশের হাত ধরলাম। ওকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য এগোলাম কিন্তু ও এগোলো না। পাথরের ন্যায় ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি পিছনে ফিরে নুহাশের দিকে তাকালাম। নুহাশ আমার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে ওর বন্ধুরা সব হাসছে। রেস্টুরেন্টের সবাই মোটামুটি কৌতূহলী দৃষ্টিতে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। নুহাশ এগোচ্ছে না, উল্টো আমার হাত এক ঝটকায় ছেড়ে দিল। আমি তখনো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। বোকার মতো আবারো প্রশ্ন করলাম,"তোমার কাছে আমার চেয়ে ঐ মেয়েটা বেশি মূল্যবান।"নুহাশ হাসলো, দানবীয় হাসি। অতঃপর বললো,"তুই ভাবলি কী করে তোর মতো একটা লো-ক্লাস, আনসোশ্যাল মেয়েকে আমি ভালোবাসবো? তোর সাথে একটু টাইম পাস করলাম আর কী! তাতেই তো তোর অহংকারে মাটিতে পা পড়ছে না। যা, গেট লস্ট আর আমার পাশে যে মেয়েটাকে দেখছিস, ও শুধু আমার বেস্টফ্রেন্ড না, আমার বর্তমান গার্লফ্রেন্ড রাইমা।"

নুহাশের কথা শোনার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। দেড় বছরের সম্পর্ক তার কাছে টাইমপাস? তাও গার্লফ্রেন্ড থাকতে অন্য মেয়ের সাথে? রাইমা মেয়েটা হাসছে। অবশ্য হাসবেই তো। এবার সবকিছু স্পষ্ট হলো আমার কাছে। ক্যাম্পাসে প্রথমদিনেই রাইমা মেয়েটার অন্যায়ের প্রতিবাদে দুটো কথা বলেছিলাম। তাই আমার জীবন থেকে দেড় বছর কেড়ে নেওয়া হলো। রেস্টুরেন্টে আর দাঁড়ালাম না, লজ্জায় চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।

বাসায় এসেই দরজাটা লাগাতে ধরলাম, পারলাম না। মা ঘরে ঢুকলেন। আমি কাঁদছিলাম বুঝতে পারলেন কিন্তু কিছু বললেন না।

সন্ধ্যায় বাবা এলেন, সোজা আমার ঘরে ঢুকলেন। আমার মুখ তখনো রাশভারি। মুখ দেখেই বাবা বুঝেছেন আমার মন খারাপ। মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় ডাকলেন আমায়।

-"তারা, কি হয়েছে তোমার?"

-"কিছুনা বাবা।"

-"আমার থেকে লুকিয়ে তো লাভ নেই মা।"

-"আচ্ছা বাবা, মানুষ কেন সম্পর্কের মূল্য বোঝে না?"

-"মূল্য বিবেচনার ক্ষেত্রে আগে বুঝতে হবে ঐ মানুষটার কাছে আদৌ সম্পর্কের মূল্য আছে কিনা।"

-"আমার অনুভূতিগুলো নিয়ে না খেললেও পারতো ও বাবা। কেন করলো এমন?"

-"কি হয়েছে না বললে আমি কী করে বুঝবো পাগলী?"

দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, একদমে বাবাকে সবটুকু বললাম। বাবা গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। অতঃপর মুচকি হেসে বললেন,"তোমার জন্য একটা পাত্র দেখেছি। ছেলে খুব ভালো। তোমার কি আপত্তি আছে?" বাবা কোন কথার মধ্যে কোন কথা তুললেন ভাবতেই রাগ লাগলো কিন্তু সেটা প্রকাশ করলাম না। মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,"যে সম্পর্কে সম্মান নেই, সে সম্পর্ককে টুকরো টুকরো করে কেটে বের হয়ে আসতে শিখো।" আমি হাসলাম, মলিন ঠোঁটে ফুটলো হাসি।

তিন মাস পর,

তন্ময়ের সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। লক্ষ করলাম একটা মহিলা বারবার তন্ময়ের দিকে তাকাচ্ছে। প্রথমে তেমন গুরুত্ব না দিলেও একটু পর খেয়াল করলাম মহিলাটা তন্ময়ের ছবি তোলার চেষ্টা করছে। সামনে গিয়ে ফোনটা কেড়ে নিলাম। মহিলাটা রাগী চোখে তাকালো আমার দিকে।

-"এসব কী অসভ্যতা?"

-"অসভ্যতা তো আপনি করছেন। আমার স্বামীর ছবি তুলছেন কেন?"

-"আ..আমি ভাবলাম আপনার ভাই।"

-"যাই হোক আপনি ছবি তুলবেন কেন?"

মহিলাটা মাথা নিচু করে চলে গেল। তন্ময়কে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

-"কি হয়েছে? হাসছো কেন?"

-"তোমার অধিকার খাটানো দেখে। এখন তুমি আমার স্ত্রী তাই আমার উপর তোমার অধিকারটাই বেশি। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, না আমি, না তুমি আর না সমাজ। তুমি যদি অপাত্রে ভালোবাসা দান করো, তার অধিকার কিংবা স্বীকৃতি তোমায় কেউ দেবে না কিন্তু যখন সম্পর্কটা হালাল তখন তোমার স্বামীর উপর তোমার চেয়ে বেশি অধিকার কারও নেই। বুঝলেন বিবিসাহেবা?"

-"জ্বী।"

নুহাশ এখন কী অবস্থায় আছে আমি জানিনা, জানতেও চাইনা। আমার জীবনে তন্ময়ের মতো একজন মানুষ এসেছে এর চেয়ে আর বেশি সুখের কিছুই হতে পারে না। তন্ময় আলতো করে আমার হাত ধরলো। আবারো আমরা হাঁটতে লাগলাম একসাথে।

সমাপ্ত||

 

~মিহি

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।