তারাবীর নামাজ শেষ করে বাড়িতে ঢুকেছি।
আকাশটা মেঘলা ছিলো। বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই কারেন্ট চলে গেলো। সেই সাথে শুরু হলো প্রচন্ড ঝড় আর বৃষ্টি৷ বাতাসের গতির কারণে জানালার পাল্লা শব্দ করতে লাগলো।
পুরো বাড়িতে আমি একা থাকি। তাই জানালাগুলো আমিই বন্ধ করলাম। ক্রমেই ঝড়ের বেগ কমে আসলেও বৃষ্টি বাড়তে শুরু করলো।
আমি ব্যাটারিচালিত ছোট্ট একটি টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে, বসে রইলাম জানালার ধারে। উপভোগ করতে লাগলাম বৃষ্টি।
বৃষ্টি উপভোগ করার একটা পদ্ধতি আছে। এমনি এমনি বৃষ্টি কখনো মজা লাগে না। বৃষ্টি মজা লাগানোরও নিয়ম আছে।
প্রথমে স্থির দৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখা শুরু করুন। চাইলে এলোমেলো ভাবে বৃষ্টির ফোটাও গুনতে পারেন।
তারপর হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির উষ্ণতা গায়ে মাখুন। বৃষ্টির পানির স্পর্শ যখন হাতে পরবে,সমস্ত শরীরে এক অজানা আনন্দ কাজ করতে শুরু করবে।
তারপর চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোটার শব্দ শুনতে থাকুন। অবশেষে ঘ্রাণ নিন বৃষ্টির। সেই ঠান্ডা নিশ্বাসের সাথে সাথে সজীব হয়ে যাবেন। নিজের সম্পুর্ন ফুসফুস বাতাস দিয়েই ধুয়ে ফেলতে পারবেন সেই সময়।
তারপর বৃষ্টির গতিপ্রকৃতি বুঝে ইচ্ছা হলে ভিজতে পারেন।মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত।
যাই হোক,
আমিও সেইমতো কাজ শুরু করলাম।
যেই না চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোটার শব্দ শোনার প্রস্তুতি নিলাম,হঠাৎ করেই মেইন গেটে কেও নক করলো।
এতটা বৃষ্টির মধ্যে সেটা ভালোভাবে শুনতে পাই নি। তাই নিজের কাজে মনোযোগী হলাম। আবারও আওয়াজ হলো গেটে। এটা আগের চেয়েও স্পষ্ট।
চোখ খুলে ফেললাম। গেটে ঘনঘন গুতা দিতে লাগলো। বোঝাই যাচ্ছে,বাইরের মানুষটা বেশ অধৈর্য।
পাশের জানালা খুলে গেটের দিকে তাকালাম। গ্রিলের ফাক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থার কয়েকটা ছায়ামুর্তি।
এক মুহুর্তের জন্য হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দিলো। এ কেমন বিপদে পরলাম রে বাবা?
কিছুদিন হলো মিসির আলী সিরিজের বইগুলো পড়া শুরু করেছি,তারপর থেকে অলৌকিক জিনিশের উপর বিশ্বাস প্রায় উঠে গেছেই বলা যায়। তবুও খানিকটা ভয় ভয় করতে লাগলো।
ভয়ডর ফেলে সদর দরজা খুলে ফেললাম। এগিয়ে যেতে শুরু করলাম মেইন গেট লক্ষ করে। ক্রমেই সাদা কাপড়ের ছায়ামুর্তিগুলো স্পষ্ট হচ্ছিলো। আমি আরও দ্রুত এগিয়ে গেলাম। এরকম জিনিশ কোন ক্রমেই হারানো যাবে না। এই রহস্য আমাকে দেখতেই হবে।
এতদিন শুধু শুনে এসেছি। আজ দেখবো।
গেটের কাছে এগিয়ে যেতেই ছাতার নিচ থেকে মাথা বের করে নারী কন্ঠে বলে উঠলো,
-ভাইজান বাঙ্গী নেন। আপনারে তো বাড়িতে খুজেই পাওয়া যায় না। তাই এই রাত্রিবেলা আসলাম।
বলাই বাহুল্য। পাশের হিন্দুপাড়ায় কয়েকজন বিধবা মিলে বাঙ্গীর ব্যাবসা করে। আর তারা ঘরে ঘরে গিয়ে সেটা সাপ্লাই দেয়।
.
মাহফুজ আহম্মেদ মাফি
Comments (0)