ওর সাথে আমার পরিচয় হয় ম্যাসেঞ্জারের একটা গ্রুপে। ও তখন ওর মায়ের নামের আইডিতে সেই গ্রুপে যুক্ত ছিল। আর আমি আমার আসল আইডিতেই ঐ গ্রুপে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু ও ওর নাম বলেছিল ওর মায়ের নাম মিলিয়ে। প্রতি রাতে ওর সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক কথা হতো। তখন পর্যন্ত ওর কোন ছবি আমি দেখি নি। ওর ছবির জায়গায় ওর মায়ের ছবি দেয়া ছিল। কিন্তু আমার আসল ছবি ঐ গ্রুপে দেওয়া ছিল। ও ঢাকার একটা সরকারি মেডিকেল কলেজের ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট ছিল। ও বলেছিল, পড়াশোনার পাশাপাশি ও একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে। ওরা দশ ভাই বোন। বাড়ি ছিল ঠিক আমার পাশের এরিয়াতে। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম যে, ঐ এরিয়ার মেয়েরা সাধারণত বেশি পড়াশোনা করে না। কিন্তু ও খুব ব্যতিক্রম ছিল; যেমন পড়াশুনায়, তেমন চিন্তা-চেতনায়। ওর সাথে প্রতিদিন রাতে মেসেজের মাধ্যমে অনেক কথা হতো। যতই ওর কথা শুনতাম আমি মুগ্ধ হতাম। ভীষণ ধার্মিক ছিল। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখতো এবং সব সময় নিকাব পরতো। আমাকে বিভিন্ন রকম ধর্মীয় উপদেশ দিতো। বলেছিল ও নাকি পিওর সিঙ্গেল। তখন মনে হলো, আমি মনে মনে যেরকম মেয়ে খুঁজছিলাম, আল্লাহ মনে হয় সেরকম একজনকে আমার জন্য পাঠিয়েছেন।
হঠাৎ একদিন ঐ গ্রুপে ওর সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। যেহেতু ওর ফোন নাম্বার কিংবা আসল ফেসবুক আইডি কোনটাই নেওয়া হয়নি, তাই ওর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে উঠলো। ফেসবুক ঘেটে ওর মায়ের আইডি বের করে একটা ফেক আইডি থেকে নক দিলাম। কিন্তু কোন রেসপন্স পেলাম না। ওর ব্যাপারে আমার বড় বোনকে জানালাম। আমার বোন ওর সব তথ্য সংগ্রহ করে আমাকে জানালো। আসলে ও নয়, ওর মা স্কুলের শিক্ষক; ওর বাবা অসুস্থ এবং কিছু করেন না। আর ওর কোন ভাইবোন নেই। এছাড়া ওর দুই বছর স্টাডি গ্যাপ আছে। আমার বোন আমাকে না জানিয়েই ওদের পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমার বায়োডাটা দেখে ওর পরিবার আমাকে ভীষণ পছন্দ করলো। ওরা আমাদেরকে দেখতে আসতে বলল। আমি খুব ইতস্তত বোধ করছিলাম। কারণ ও বলেছিল আমার ব্যাপারে ওর অভিভাবক জানতে পারলে ওর সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। তখন আমি বলেছিলাম আমি এমন কাজ করবো না। তাই ভাবলাম ওকে দেখে বাসায় বলবো মেয়ে পছন্দ হয় নি। তারপর একদিন ওকে দেখতে গেলাম আমরা। সামান্য কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ওকে আমার প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিল। (ওর দাঁতগুলো কিছুটা ফাঁকা, ঠোট মোটা ঝোলানো এবং কণ্ঠস্বরটা একটু মোটা ছিল)। আসলে ওর বাহ্যিক সৌন্দর্য থেকে তখন ওর ভেতরকার রূপটাই আমার কাছে মুখ্য হয়েছিল। (বাহ্যিকভাবে ও অতো সুন্দরী ছিল না।)
এর দুদিন পর ও আমাকে মেসেঞ্জারে নক দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলে (ওর মাকে না জানিয়ে)। ওর আকস্মিক মেসেজে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম ও আমাকে পছন্দ করেছে। তাই আমার প্রচন্ড পেট ব্যথা সত্ত্বেও ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেখানে ওর ৫ জন সিনিয়র কাজিনদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। বুঝতে পারি ও আমাকে পছন্দ করেছে। ওর কাজিনরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, ওকে পছন্দ হয়েছে কি না, কত দ্রুত বিয়ে করবো ইত্যাদি? আমি তখন ওদেরকে হ্যাঁ বলে দেই। আর বলি দুই পরিবার আলোচনা করে বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করবে। এই প্রথম কোন মেয়েকে আমি বিয়ের জন্য হ্যাঁ বললাম। আমার জন্য প্রায় একশত এর উপর পাত্রী দেখা হয়েছিল। কিন্তু কাউকেই আমার মনে ধরে নি। এমন নয় যে তারা দেখতে সুন্দরী ছিল না, কিংবা আমার জন্য অযোগ্য ছিল। ওর চেয়েও অনেক বেশি সুন্দরী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন মেয়েও এসেছিল। কিন্তু কেন যেন কাউকেই আমার ভালো লাগেনি। আসলে ওর কথা বলার স্টাইলটা আমার খুবই ভালো লেগেছিলো। যেটা আগে কখনো কারো সাথে ফিল করি নি। ও মেডিকেলের স্টুডেন্ট বলেই যে ওর প্রতি আমার আগ্রহ হয়েছে তা নয়। আমার কর্মজীবনের শুরুটাই হয়েছিল ইন্টার্ন মেডিকেল স্টুডেন্টদের সান্নিধ্যের মধ্যে। তখন সুন্দরী অনেক মেডিকেল স্টুডেন্ট মেয়ে তাদের দরকারে আমার অফিসে আসতো। আমার সাথে অনেকে গল্প করতো বা আমার সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হতে চাইতো। কিন্তু তারা কেউই ঢাকার ছিল না বলে আমি তাদের বিষয়ে অনাগ্রহী ছিলাম। তাই তাদের সাথে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বলতাম না।
বিয়ের জন্য কোন পাত্রীর সম্বন্ধ আসলে আমি কখনো তাদের সাথে অনলাইনে বা ফোনে যোগাযোগ করি না। কিন্তু ও নিজে থেকে মেসেঞ্জারে আমার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা শুরু করলো। ওর সাথে যেহেতু আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো, তাই আমাদের সারাদিন মেসেঞ্জারে টেক্সট আদান-প্রদান হতো। আর রাতে তিন থেকে পাঁচ ঘন্টা করে কথা হতো। দৈনিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ ঘন্টাই আমাদের টেক্সটে অথবা ফোনে কথা হতো। আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হতো। যেমন, কার কী ভালো লাগে, মন্দ লাগে, সারাদিন কি ঘটলো, অতীত ঘটনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি। ও আমাকে ওর দুই বছরের স্টাডি গ্যাপের কারণ বর্ণনা করে। (ওর কারণটা মিথ্যা ছিল।) আমিও আমার জীবনের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবই ওকে বিস্তারিত বলি। এভাবে আমি আস্তে আস্তে ওর প্রতি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ি। বুঝতে পারি ওকে আমি ভালোবাসতে শুরু করেছি। আর হ্যাঁ, এটাই আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। ও বলেছিল, নিয়ার গ্রুপে ওর সাথে পরিচয় হওয়ার পর ওকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টা ওর বা ওর কাজিনদের খুব পছন্দ হয়েছে। তাছাড়া ও এখন বিয়েতে রাজি ছিল না। আমিই নাকি প্রথম পাত্র যাকে বিয়ের জন্য দেখা করতে ও রাজি হয়েছিল। আমার প্রতি ওর এতো আগ্রহ দেখে আমি ভেবেছিলাম ওও বুঝি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। আমার বিষয়ে ওকে আমি একটি কথাও মিথ্যা বলি নি। (কিন্তু ও আমার কাছে ওর বিষয়ে অনেক মিথ্যা কথা বলেছে যা এখন বুঝতে পেরেছি।) আমি তো আমার বিষয়ে সবকিছু ওকে খুলে বলেছি। কোন কিছুই লুকাই নি। আমার কখনো কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে সারা জীবনে তিনজন মেয়েকে আমার ভালো লেগেছিলো। কিন্তু তাদেরকে কখনো বলতে সাহস পাই নি। এই বিষয়টা আমি ওকে বিস্তারিত বলেছিলাম। আমি খুব রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছি এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের। ওকে বারবার জিজ্ঞেস করেছি যে, ওর কোনো সম্পর্ক ছিল/আছে কি না। ও বারবারই অস্বীকার গিয়েছে এসব বিষয়। শুধু বলেছিল প্রাইভেট পড়ার সময় প্রাইভেট টিউটরকে ওর ভালো লেগেছিল। কিন্তু তখন বলতে সাহস পায় নি। পরবর্তীতে ওর সেই ভালো লাগা আর থাকে নি। (এটা একটা মিথ্যা কথা ছিল।) ও টেক্সট দিয়ে প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ খবর নিতো। আমার সাথে অনেক কিছু নিয়ে মজা করতো। ওকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ডক্টররা সাধারণত ডক্টরদের বিয়ে করে। আমি যেহেতু ডক্টর না, ও কেন আমাকে পছন্দ করলো? উত্তরে ও বলেছিল ওর হাজব্যান্ড ওয়াইফ দুইজন ডক্টর হলে ছেলে মেয়ে মানুষ করা কষ্টকর হয়ে যায়। এছাড়া আরো অনেক বিষয়ে সমস্যা হয়। তাই ওর ডক্টর ছেলে হাজবেন্ড হিসেবে পছন্দ না। (এটাও একটা মিথ্যা কথা ছিল।) ও যেহেতু বাবা-মার একমাত্র সন্তান আর আমার বাবা-মা ছিল না, তাই আমি ভেবেছিলাম ওর সাথে আমার বন্ডিংটা খুব ভালো হবে। তাছাড়া ওর মায়ের নাম ছিল আমার মায়ের নামে এবং ওর আর আমার উভয়ের নাম ম দিয়ে শুরু। আমাদের মধ্যে এরকম অনেক বিষয়ে মিল ছিল।
কিন্তু এর মধ্যে ওর সাথে আমার ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যে ঝগড়া শুরু হলো। আমারও একটু দোষ ছিল। ঝগড়া হলে আমি বাচ্চাদের মত অভিমান করে থাকতাম, বেশ কিছু সময় ধরে রাগ দেখাতাম। আসলে আমি ওকে অনেক আপন ভাবতাম, তাই এমন করতাম। এদিকে ওর ফ্যামিলি দ্রুত বিয়ের জন্য আমাদেরকে চাপ দিচ্ছিল। ওর দুলাভাই বারবার ফোন করে জিজ্ঞেস করছিল বিয়ের ডেট কবে? কিন্তু ও বিয়ের কথা শুনলেই খুব ক্ষেপে উঠেতো। ও বলতো আমরাই নাকি বিয়ের জন্য ওদের খুব চাপ দিচ্ছি। ও এতো দ্রুত বিয়ে করতে চাচ্ছে না। ওর এখন বিয়ে করতে ভয় লাগছে, কান্না পাচ্ছে। বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়েছে আমি কেন সেটা জানি না, আমি কেন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারি না - এ বিষয়টা নিয়ে ও আমার সাথে ঝগড়া করতো। আমি বারবার ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, ও না চাইলে এখন বিয়ে হবে না। আর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করতে প্রস্তুত আছি। আর বিয়ের তারিখতো মুরুব্বীরাই ঠিক করবে, তাই নয় কি? আমার বোন বলেছিল শুক্রবার দিন এংগেজমেন্ট হবে আর ওর মা বলেছিলো না, আক্দ হবে। ও এটা জানার পর আমার সাথে ঝগড়া করে বিয়েটা ক্যান্সেল করতে আমাকে বাধ্য করেছে। আমার একটাই বোন আমি তাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করি এবং বন্ধুর মতো সব বিষয় শেয়ার করি। তিনি ওকে খুবই পছন্দ করেছিলেন। তিনি আমাকে ফোন করে সব সময় ওর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতেন। ও এই বিষয়টা পছন্দ করতো না। আমার বোনকে কিছু জানালে ও ক্ষেপে যেতো। ও আমাকে খুব সন্দেহ করতো। ও নিজেও স্বীকার গিয়েছিল ও খুব সন্দেহপ্রবণ। ও আমাকে ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করতে বলেছিলো। বলেছিলো আমার বর্তমান ছবি নাকি মেয়েদেরকে আকৃষ্ট করে। আমি ওর পছন্দমত একটা ছবি আমার প্রোফাইলে দেই। আমার বিষয়ে ওর একটা আপত্তি ছিল যে, আমি নিয়মিত নামাজ পড়ি না। ওর কারণে আমি নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করি। রাতে আমার সাথে ৩-৫ ঘন্টা কথা শেষ হওয়ার পর ও তাহাজ্জুত ও ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতো এবং আমাকেও পড়তে বলতো।
ও আমাকে বলেছিল ম্যাসেঞ্জারের নিয়ার গ্রুপ আইডিটা বন্ধ করে দিতে। আমি মজা করে বলেছিলাম এখন না, বিয়ের পর এটা বন্ধ করে দেবো। আসলে এই আইডি ম্যাসেঞ্জারে ওপেন করা হয় বলে বন্ধ করা যায় না। আর ওর সাথে যোগাযোগ হওয়ার পর থেকে নিয়ার গ্রুপ আর ইউজ করতাম না। এছাড়া আমার একটা ফেক আইডি ছিল। যে আইডিতে ওর মায়ের আইডি থেকে ও আমার সাথে চ্যাট করতো। যেহেতু ও ওর মায়ের আইডি থেকে নিয়ার গ্রুপে ঢুকে ছিল। তাই নিয়ার গ্রুপে ওকে হারিয়ে ফেলার পর আমি ওর মায়ের আইডির মেসেঞ্জারে নক দিয়েছিলাম। তখন ও রেসপন্স না করলেও পরে আমার ফেক আইডিতেই ওর সাথে প্রথম দিকে কথা হতো। কিন্তু এই ফেক আইডি নিয়ে ওর ব্যাপক আপত্তি ছিল। ও আমাকে এই আইডি নিয়ে সন্দেহ করতো। আমি ওকে প্রথম সেদিন ওর সাথে দেখা হয় সেদিনই আমার ফেক আইডির সব কনভার্সেশন দেখিয়েছিলাম। আসলে আমি ফেক আইডির মেসেঞ্জারে আমার অফিসের বা ব্যক্তিগত দরকারি বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ও তথ্য সেভ করে রাখতাম। এছাড়া ও আমার আসল আইডির পাসওয়ার্ড চাইতো। আমি বলেছিলাম এখন নয়, বিয়ের পরে দিবো।
এক শুক্রবারে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। এর তিন দিন আগে এসব বিষয় নিয়ে ওর সাথে আমার বেশ ঝগড়া হয়। আমার সারা দিনে যা ঘটতো তা আমি ওকে বলতাম। আমি নিজ থেকেই ওকে বলেছিলাম নিয়ার গ্রুপ থেকে বেশ কয়েকজনের সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে এবং তাদের মধ্যে দুই একজনের সাথে মাঝে মধ্যে কথা হয়। এটা শুধুই বন্ধুত্ব অন্য কোনো সম্পর্ক না। একদিন বেশ রাতে ওর সাথে কথা বলছিলাম। এমন সময় একজন আমাকে টেক্সট করে জিজ্ঞেস করে এতো রাতে কার সাথে কথা বলছেন? আমি তাকে বলি আমার বউয়ের সাথে। এই কথাটা ওকে আমি সাথে সাথেই জানাই। এই সত্য বলাটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো। ও বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেনি। ও এটা নিয়ে খুব রাগারাগি শুরু করে। বলে আমি নাকি ভার্চুয়াল হয়ে গেছি। আসলে আমার মা মারা যাওয়ার পর আমি ভীষণ একা হয়ে যাই। আমার তেমন কোন বন্ধু-বান্ধব ছিল না। বাসায় যখন থাকতাম একা একা কান্না করতাম। তখন একদিন একজনের পরামর্শে নিয়ার গ্রুপে ঢুকি এবং অপরিচিত মানুষদের সাথে গল্প করি। এটা ছিল শুধুই একাকীত্ব এবং হতাশা কাটানোর জন্য। ওর সাথেও আমার এই গ্রুপেই পরিচয় হয় এবং ও এই গ্রুপ নিয়েই আমাকে সন্দেহ করতো।
ওরও একটা ডুপলিকেট আইডি ছিল। আমি যখন এটার প্রসঙ্গ তুললাম তখন ও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। ও আমাকে কিছু অপমানজনক কথা বলে ব্লক করার কথা বললে এর আগেই আমি ওকে মেসেঞ্জারে ব্লক করলাম এবং ও আমাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করলো। পরদিন সকালে অবশ্য আমি ওকে মেসেঞ্জারে আনব্লক করে দেই। পরে আমার বোন ওদের বাসায় গিয়ে ওকে বোঝানো শুরু করলে, ও আমাকে ফোন করে, হাতে মেহেদি দিয়ে লিখে সরি বলে যোগাযোগ শুরু করে। আমি একটু অভিমান করে ওকে বলি, ওর মত সন্দেহপ্রবণ মেয়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ও বিয়েতে যাতে না করে দেয়। তখন ও আমাকে বলে, ও রাজি হলে না করবে কেন? ও কেন খালি খালি মিথ্যে করে বলবে যে আমাকে ওর পছন্দ হয় নি? তখন আমি ওকে জানাই ওকে আমার এখন পছন্দ হচ্ছে না। ওর মতো সন্দেহপ্রবণ, বাতিকগ্রস্থ মেয়ের সাথে সংসার করা সম্ভব না; ও যাতে আমাকে মুক্তি দেয়। আর বিয়ের বিষয়টা আপাতত স্থগিত করি। আসলে সবই তখন অভিমান থেকে বলেছিলাম, মন থেকে বলিনি। পরের দিন যখন রাগ ঠান্ডা হয়, তখন আবার ওর সাথে যোগাযোগ করা শুরু করি। ওকে স্যরি বলি। আর বলি, আমি তোমার জন্য আরো ভালো আমি হতে চাই। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়।
তারপর ও ওর কাজিনের বাসায় যায় এবং বেশ কয়েকদিন ওখানে থাকে। ওখানে নেটওয়ার্ক খারাপ হওয়ায় ওর সাথে ঠিকমত যোগাযোগ করতে পারি নি। আমি ওকে মেসেজ দিলে ও সময়মতো উত্তর দিতে পারে না। আবার ফোন দিলে ধরতে পারে না। ওকে আমি রাতের বেলা মেসেজ দিই, ও সকালে এর রিপ্লাই দেয়। আমার খুব অভিমান হচ্ছিল ওর উপর। সে সময় আমি অফিস যাচ্ছিলাম। মেসেজটা আমি দেখতে পারিনি। এর মধ্যে ও মেসেজটা ডিলিট করে দেয়। আমি খুব বিরক্ত হলাম। কারণ ওর জন্য আমি এতোটাই অস্থির, আর ও এক্ষেত্রে উদাসীন। সেদিন আর ওর সাথে কোন যোগাযোগ করি নি। ঐদিন রাতে আননৌন নাম্বার থেকে একটা মেয়ে আমাকে ফোন করে। কিন্তু কোন কথা না বলে চুপ করে থাকে; আবার ফোনটাও কাটে না। আমার খুব রাগ হয়। আমি যে ওর ফোনের প্রতীক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে অপরিচিত নম্বর থেকে মেয়েমানুষের ফোন! আমি ধমক দিয়ে ফোনটা কেটে দেই। কিন্তু পরে কণ্ঠস্বরটা আমার পরিচিত মনে হয়। আসলে যে এটা ও ফোন দিয়েছিল তখন আমি বুঝতে পারি নি। পরদিন থেকে ও আর আমার ফোন ধরে না। আমার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে জানতে পারি ওর এক কাজিন হাজবেন্ডকে সন্দেহ করে সুইসাইড করেছে। তাই সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তখন ওর মা জানায় যেহেতু কাছের মানুষ মারা গেছে, তাই বিয়েটা হতে কিছুদিন দেরি হবে। এর কয়েক মাস পরে ওর মা আমার বোনকে ফোন দিয়ে জানায়, সামনে ওর পরীক্ষা আছে। তাই এখন ও বিয়ে করতে পারবে না। ওর পরীক্ষার পর ও বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। আমি আমার বোনকে বলি এতে আমার কোন সমস্যা নাই।
একদিন রাতে ও আমাকে ফোন করে জানায়, ও এখন বিয়ে করতে পারবে না। ওর মানসিক অবস্থা নাকি খুবই খারাপ। ও যদি এখন বিয়ে করতো তাহলে নাকি আমাকেই করতো! ও বলেছে, ওর স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে, এক বছর থেকে ছয় মাসও লাগতে পারে নাকি! তাই ও আমাকে বলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে। কিন্তু ততদিনে আমি ওর জন্য ভীষণভাবে অস্থির হয়ে পড়েছি। কিছুদিন পর ও মেসেজ দিয়ে আমাকে জানায় আমি নাকি ওর জন্য এখন কম্পিটেবল না। তখন আমি ওকে টেক্সট দিয়ে বলি ওর জন্য আমি সবকিছু করতে পারবো। আমি ওকে আমার আসল ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড টেক্সট দিই। (ও একদিন আমার আসল ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড চেয়েছিল, তখন দেই নি।) এছাড়া আমার ফেক আইডিটা বন্ধ করে দিই। এছাড়া ও আমাকে একদিন বলেছিলো ওদের বাসায় গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওকে আংটি পরিয়ে দিয়ে আসতে। তখন আমি বলেছিলাম এটা করতে আমার খুব লজ্জা লাগবে, আমি পারবো না। এবার ওকে বলি, এখন এটা করতে প্রস্তুত আছি আমি। ওকে আমি বারবার বলেছি যে, আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে হবে। এমন কোন কাজ আমি করবো না, যা ওকে বা ওর পরিবারকে কষ্ট দেয়। ও পড়াশোনা করবে, আমি রান্না করবো। ওকে নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরবো, হজ্বে যাবো। ওর পছন্দ মত জায়গায় আমার সাধ্যের মধ্যে একটা ফ্ল্যাট ওকে কিনে দেবো। আমাদের ছোট্ট সুখের একটা সংসার হবে। ও দেশের বাইরে পড়তে গেলে আমি ওকে সব রকম সহায়তা করবো।
কিন্তু ও এসব কথায় আমার উপর ভীষণ ক্ষেপে গেলো। আমার নাম্বার ব্লক করে দিল। আমি ভিওআইপি অ্যাপস এ মেসেজ দিয়ে, ফোন করে ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম। (ভিওআইপি এপস দিয়ে মেসেজ দিলে একেক সময় একেক নাম্বার দেখায়। ও সবগুলো নাম্বার ব্লক করে দিলো।) ওকে আমি বললাম আমি এমন একজন মানুষকে চাই যে আমাকে শিক্ষকের মত সঠিক পথের দিক নির্দেশ করবে, অভিভাবকের মতো শাসন করবে, বন্ধুর মতো সব সময় পাশে থাকবে এবং শিশুর মত ভালোবাসবে। ওকে আমি সেই রকম জীবন সঙ্গীনী হিসেবে পেতে চাই। তখন ও বলে, ও এসবের জন্য এখন অতোটা ম্যাচিউরড না। ওকে এও জানাই, ওকে না পেলে জীবনে আমি আর কখনো বিয়েই করবো না। কারণ ওর জায়গায় আমি অন্য কোন মেয়েকে এখন আর কল্পনা করতে পারছি না। ও শুধু বারবার মেসেজ দিয়ে, ফোন করে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো ওর সাথে আমার যায় না। আমাদের দুজনের পার্সেপশন নাকি মিলে না। ও কোনো ভাবেই আমাকে বুঝতে চেষ্টা করলো না। উল্টো ওর বাবা লোক দিয়ে বা তিনি নিজে আমাকে শাসালো, যাতে ওকে ফোন করে/মেসেজ দিয়ে বিরক্ত না করি। আমার মনে খুব কষ্ট হলো। আমি শুধু ওকে ফোন করে শেষবারের মতো জানতে চেয়েছিলাম, আমার অপরাধটা কী ছিল? আর আমি যদি সত্যি কোন অপরাধ করেই থাকি সেটা কি এতোই গুরুতর যে শত অনুনয়-বিনয় করার পরও ক্ষমা করা যায় না? আমার কথায় বা আচরণে ও কোন কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি এর জন্য শত শত বার ক্ষমা চেয়েছি। আমার ঝগড়া বা রাগ করার জরিমানা হিসেবে ওকে একটা আইফোনও উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছিলাম। এও বলেছিলাম, এরপর যদি আমি ঝগড়া বা রাগ করি এবং এর জন্য যদি আমি দায়ী থাকি, তাহলে প্রতিবার তাকে জরিমানা দেবো।
একদিন আমার বোন ওকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে আসলে ওর সমস্যাটা কী? তখন ও আমার বোনকে বলে আপনার হাজবেন্ড এর জায়গায় অন্য কাউকে কি বসাতে পারবেন? ওর সাথে অন্য একটা ছেলের সম্পর্ক আছে (ছিল)। সেই ছেলেকে ও বিয়ে করবে। সেই ছেলে ডক্টর। (অথচ আমাকে বলেছিল ডক্টর ছেলে তার পছন্দ না।) বর্তমানে জার্মানিতে থাকে। সেই ছেলে তার এক্স বয়ফ্রেন্ড ছিল। মাঝে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় ও আমার সাথে বিয়েতে রাজি হলেও তখনই বিয়ে করতে চাচ্ছিল না। কিন্তু এখন তার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক ভালো হওয়াতে ও আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। ও এই সত্যি কথাটা আমাকে কখনো নিজ থেকে বলতে সাহস পায়নি। ও শুধু ইনিয়ে বিনিয়ে আমাকে বুঝাতে চেয়েছে আমি ধার্মিক না, আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ওর মিলে না; এজন্য ও আমাকে বিয়ে করবে না। আসলে ও আমাকে দ্রুত বিয়ে করতে চাচ্ছিল না এই ভেবে যে, এক্স-বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওর সম্পর্ক যদি আবার ভালো হয়ে যায়। ওকে বারবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও ও ওর এক্স-বয়ফ্রেন্ডের বিষয়টা কখনোই আমাকে জানায় নি। ও একই সাথে আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছিল এবং ওর এক্স-বয়ফ্রেন্ডের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছিল। ও যদি একটা বার বলতো যে, এক্স বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ওর সম্পর্ক রিকনসাইল হয়েছে তাহলে আমি আর ওর সাথে যোগাযোগ করতাম না; মনের অজান্তে ওকে ভালোবাসা হতো না। এই ব্যাপারটা বললে ও যে একজন প্রতারক, এটা ধরা পরে যেতো। ও আসলে আমাকে ব্যাকআপ হিসেবে রেখেছিল।
পরে কিছু খবর নিয়ে আরো জানতে পারি, ওর আরো কয়েকটা বয়ফ্রেন্ড ছিল। ও যেখানে মার্শাল আর্ট শিখতে যেতো সেখানেও একজনের সাথে ওর সম্পর্ক হয়েছিল। ওর পূর্বেও বেশ কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক ছিল বলেই ও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। আরেকটা বিষয় আমার কাছে খুব অদ্ভুত লেগেছে। ও যখন দ্বিতীয়বার ওর পাঁচ জন সিনিয়র কাজিন সাথে নিয়ে দেখা করতে এসেছিল তারা প্রত্যেকেই জানতো যে, ওর বর্তমানে অন্য ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক চলছে। তারপরও তারা কিভাবে অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে ব্যাপারে দেখা করতে এসেছে? ভাবা যায় কতটা নিম্ন শ্রেণীর রুচি ওদের পরিবারের লোকজনদের! পরে ওর কাজিনরা বিষয়টা আমার কাছে স্বীকারও গিয়েছে। এছাড়া ও অনেক মিথ্যা কথা বলতো। আমি কিছুটা বুঝতে পারলেও ভাবতাম ও মজা করেই এসব বলতো। আরো কিছু খবর নিয়ে জানতে পারি, ওর মেডিকেলে ভর্তি হওয়াটাও রহস্যজনক। ও প্রথমবার বাংলাদেশের কোন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও চান্সই পায়নি! কিন্তু দ্বিতীয়বার কোন যাদুর বলে সে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চান্স পেল? আসলে সেই সময় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল এবং ও সেটা কিনে পরীক্ষা দিয়েছিল (এই কথা ওর একজন আত্মীয় পরে বলেছেন যার ভাগ্নি ওর সাথে পড়তো)। যার ফলস্বরূপ ও কলেজের পরীক্ষাগুলোতে পাশ করতে পারছে না। পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়েছে এবং ২ বছর ড্রপ দিতে হয়েছে। (ওর একজন সহপাঠি এই কথাগুলি বলেছিলো)
এখন আমি ভাবি এতোটা ধার্মিক মেয়ে কিভাবে একের পর এক সম্পর্ক পরিবর্তন করতে পারে? এখন ও বলে, ওর সাথে আমার কোন প্রেমের সম্পর্ক নাই, এটা একটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিল এবং ওর সাথে আমার প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা যে সমস্ত কথা বার্তা হয়েছিল সব নাকি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এর ক্ষেত্রে পরস্পরকে জানার জন্য। কিন্তু ও পূর্বে বারবার আমাকে বলেছিল যে, ওর মা যাতে কোনোভাবেই জানতে না পারে যে আগে থেকে আমাদের পরিচয় ছিল। ওর মা একটা ভালো পাত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন বলেই আমার সাথে ওর বিয়ে হতে যাচ্ছিল। ও বলেছে তিনি যদি জানতে পারেন এটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ না, তাহলে তিনি কষ্ট পাবেন এবং বিয়েটা ভেঙে দেবেন। তাই ও এ বিষয়টা জানাতে নিষেধ করেছিল। ও যদি আমাকে সত্যিই পছন্দ না করতো বা বিয়ে করতে না চাইতো, তাহলে এই ব্যাপারটা আমাকে জানাতে কেন নিষেধ করেছিল? (ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার জন্য ওর মা কুরআন শরীফ খতম ও দোয়া ইউনুস খতম নিয়ত করেছিলেন।) ওর একজন আন্টিকে যখন প্রমাণসহ এইসব ঘটনা আমার বোন জানালো তখন তিনি আমার বোনের কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। পরে ওর মা যখন আসল ঘটনাটা জানতে পারলেন তখন ওকে খুব মেরেছিলেন। মার খাওয়ার পর ও ওর সেই পাঁচ জনের একজন ছেলে কাজিনকে আমার ব্যাপারে উল্টাপাল্টা বলে। সেই ছেলে ফোন করে আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই অত্যান্ত নোংরা ভাষায় গালাগালি করে, আমাকে থানা পুলিশের ভয় দেখায়। আমি আমার বোনকে বিষয়টা বললে তিনি ফোন করে ওর সেই অবৈধ সম্পর্কের কথা ওর কাজিনকে বলেন। আমরা বিষয়টা জানতে পেরেছি জেনে পরে ওর সেই কাজিনও বিষয়টা স্বীকার গিয়ে আমার বোনের কাছে ক্ষমা চায়।
এই ঘটনার পর আমার বোন আমার অন্যত্র বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ইতিমধ্যে আটটি প্রোপোজাল উনি নিয়ে এসেছেন যার মধ্যে তিনজনই মেডিকেলের স্টুডেন্ট (২ জন সরকারি মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট)। একজন বাদে বাকী সাতজনের পরিবারই আমার বিষয়ে খুব আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রত্যেকেরই ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ওই মেয়ের থেকে অনেক উপরে। কিন্তু এখন মেয়েদের উপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গিয়েছে। পরবর্তীতে কোন মেয়েকে যে আমি বিয়ে করবো সেই বিশ্বাসটাও এখন করতে পারছি না। আমি এখন ওকে ভুলতে পারছি না। আমি ওকে প্রচন্ড রকমের বিশ্বাস করতাম। ওর অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক, বিয়ে এসব কথা শোনার পর থেকে আমি এক রকম ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। নিজের বুকের উপর বিরাট বড় একটা বোঝা চেপে আছে বলে মনে হচ্ছে; অনেক কষ্ট লাগছে। সারাক্ষণ হৃদপিণ্ডটা এতো বেশি ধুক ধুক করছে যে, মনে হয় ওটা বুঝি বুক থেকে বের হয়ে আসবে। মাঝে মাঝে সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসে, মনে হয় এই বুঝি হার্ট অ্যাটাক করবো, মারা যাবো। যখন বাসায় একা থাকি তখন খুব অসহায় লাগে। বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কান্না করি। মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করতেও ইচ্ছে করে। একটা মেয়েকে জীবনে প্রথমবারের মতো মন প্রাণ উজাড় করে ভালবাসতে চাইলাম, নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তার কাছে সমর্পণ করতে চাইলাম অথচ সে ই আমার উপর সম্পূর্ণ মিথ্যা দোষ চাপিয়ে আমার সাথে প্রতারণা করলো। সারা দিনরাত শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করি যে আমি ওর সম্পর্কে যা যা শুনেছি সেটা যেন মিথ্যা হয়। ও যেন আমার কাছে ফিরে আসে। ফজরের নামাজের পর অনেক দোয়া করে আল্লাহর কাছে অনেক কান্নাকাটি করি।
সেদিন রাতে ওকে টেক্সট করে বলেছিলাম, ও ফোন না ধরলে আমি দুই পাতা ঘুমের ওষুধ খাবো। কিন্তু তখনই আমার বোন ফোন দিয়ে খুব কান্নাকাটি শুরু করে। আমার জন্য তাঁর খুব চিন্তা হচ্ছে। তিনি হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী। আমার যদি কিছু হয় আমার বোন নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবেন। আমার ছোট দুটো ভাগ্নে আছে। ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে এই ভেবে এতোগুলো ঘুমের ওষুধ খেতে পারলাম না। সাইক্রেটিস্ট দেখিয়েছি। বেশ কিছু ওষুধ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে আমাকে নিয়মিত সাইকোথেরাপি নিতে হচ্ছে। আমার কিছু ভালো লাগছে না। খেতে, ঘুমাতে বা কাজ করতে কোনটাই না। কোন কিছুতেই ঠিকমতো মন বসাতে পারছি না। অফিসের কাজে বারবার ভুল হচ্ছে। রাতে ঠিকমতো ঘুম আসছে না। একটু ঘুম আসলেও মাঝরাতে দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায়, তখন খুব কান্না পায়। মাঝে মাঝে মনে হয় হার্ট অ্যাটাক করবো অথবা পাগল হয়ে যাবো। আমি জীবনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম শুধু একজনকেই ভালোবাসবো এবং বিয়ে করবো। জীবনে আমি কখনো প্রেম-ভালোবাসা না করলেও ওকে মনের অজান্তেই অল্প সময়ে সত্যি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আসলে বিশ্বাসের জায়গাটা ভেঙে গেলে মানুষের মনটাও কাঁচের মতো ভেঙে যায়, যা জোড়া লাগানোর কঠিন হয়ে পরে। কী করলে ওকে ভুলতে পারবো এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবো? ওর একটা সম্পর্ক থাকা অবস্থায় কেন ও আমার সাথে এভাবে মিশতে গেল? ও যদি কাউকে ওর মনে হাজবেন্ডের জায়গায় স্থান দিয়েই থাকে তবে কেন বারবার আমার সাথে স্বেচ্ছায় দেখা করেছে, আমার সাথে এতো কথা বলেছে? আমাকে তার পছন্দ হয়েছে, বিয়ে করবে কেন বলেছে? আচ্ছা, এটা কি তাহলে প্রতারণার মধ্যে পড়ে না? মেডিকেলে পড়ুয়া মেয়েরা কি আজকাল এমনই হয়? ওদের কি মন বলে কিছু থাকে না নাকি? মেয়েদেরকে কি কখনো সত্য কথা বলতে হয় না, সবকিছু খুলে বলতে হয় না?
Comments (0)