Search

একটা নতুন গল্পের সন্ধানে

  • Share this:

পুরো নাম শরীফ রায়হান। সংক্ষেপে রায়হান। তরুণ এবং মেধাবী একজন লেখক। গল্প ও উপন্যাস লিখে অল্প
সময়েই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার বেশীরভাগ লেখাই বাসতবধর্সী। ষে কারণে খুব সহজেই মানুষের
হৃদয়ে পৌছতে পেরেছে সে।

দেশের সবচেয়ে নামী একটা প্রকাশনী থেকে নিয়মিত তার লেখা প্রকাশিত হয়। সামনেই বইমেলা। এই
উপলক্ষে প্রকাশনীর সম্পাদক তাকে জম্পেশ একটা লেখা দিতে বলেছে। কয়েকটি লেখা সে ইতিমধ্যে জমা
দিয়েছে। কিন্তু ওগুলোর একটিও সম্পাদক সাহেবের পছন্দ হয় নি। তিনি চাচ্ছেন গল্পের মধ্যে একটা নতুনত্ব বা
ব্যতিক্রমী কিছু থাকবে যা এর আগে কেউ কখনো পড়েনি। বইমেলা শুরু হতে সাত আট দিন বাকি। এত অন্ন
সময়ে নতুন একটি গল্প সে কীভাবে লিখবে? তাও আবার ব্যতিক্রমধর্মী। সমস্যা হলো একটা পারিবারিক কাজে
ওই প্রকাশনীর কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা আগাম নিয়েছে সে। ইতিমধ্যে সেটা খরচও হয়ে গেছে। "লিখবো না"
এই কথাটা এখন আর সম্পাদককে বলতেও পারছে না। বেশ গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছে রায়হান।

এপর্যন্ত সে যতগুলো গল্প বা উপন্যাস লিখেছে তা সবই বাস্তবভিত্তিক। কোনো না কোনোভাবে সে এগুলোর

সাথে সম্পৃক্ত ছিল। গল্প লিখতে গেলে কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়। সেটা অবশ্য গল্পের প্রয়োজনেই। তাই
বলে পুরো গন্পটা কল্পনাপ্রসূত? এই ধরনের কাজ সে কখনোই করে নি। আর এটা তার নীতির মধ্যেও পড়ে না।
মনে হচ্ছে এবার তাকে নীতি থেকে সরে আসতে হবে। অর্থাৎ কল্পনার সাহায্য নিতে হবে।

ভাবতে ভাবতে দু'দিন পার হয়ে গেল। মাথা থেকে এখনও কিছুই বের হয় নি তার। এদিকে সম্পাদক সাহেব
বারবার ফোনে তাগাদা দিচ্ছে। কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল রায়হান। কী করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। একটা
সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো। সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। এমন
সময় মুঠোফোনটা বেজে উঠল। চৈতী ফোন করেছে। মাস ছয়েক হলো চৈতীর সাথে পরিচয় হয়েছে গর। এর
মধ্যেই ওদের সম্পর্কটা অনেকদুর গড়িয়েছে। শাহবাগের মোড়ে অপেক্ষা করছে চৈতী। রায়হানকে নিয়ে
যাদুঘরে যাবে। শরীরটা ভালো লাগছে না রায়হানের। বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু ও না গেলে
চৈতীর মন খারাপ হবে। অনেক আশা নিয়ে বসে আছে মেয়েটি। নাহঃ! চৈতীকে নিরাশ করা ঠিক হবে না। বাধ্য
হয়ে জামা প্যান্ট পরে শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো সে।

নীল শাড়ি পরেছে চৈতী। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। কপালের টিপটাও নীল। অদ্ভূত সুন্দর লাগছে চৈতীকে। আকাশ
থেকে কোনো পরী নেমে এসেছে ষেন। চোখ ফেরাতে পারছে না রায়হান। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ওর চাহনি
দেখে লজ্জা পেল চৈতী। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিল। রায়হানের উদ্দেশ্যে বলল, “কি ব্যাপার, এখানেই
দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? ভেতরে ঢুকবে নাঃ" সম্বিত ফিরে পেল রায়হান। কিছুটা বিব্রত বোধ করল। এরপর
চৈতীকে নিয়ে যাদুঘরে প্রবেশ করল সে।

নীচতলায় সুন্দরবনের ছোটোখাটো একটা ডেমো আছে। নদী, অরণ্য এবং কিছু জীবজন্ত দিয়ে সাজানো হয়েছে
ডেমোটা। মুগ্ধ হয়ে দেখছে ওরা। বাঘের ওপর চোখ পড়তেই শরীরটা যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো রায়হানের। এত
বেশি জীবন্ত মনে হচ্ছে কেন ওটাকে? সবচেয়ে ভয়ংকর লাগছে বাঘের চোখ দু'টো। প্রচণ্ড জিঘাংসায় যেন
রায়হানকে ছিড়েখুঁড়ে ফেলবে। ভয় পেয়ে চৈতীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ও। এরপর চৈতীকে নিয়ে দ্রুত সরে
গেল ওখান থেকে। ওর কাণ্ড দেখে চৈতী একটু অবাক হলো।

“কী হয়েছে রায়হান? কোনো সমস্যা?" জিজ্ঞেস করল চৈতী।

“না, কিছু না। চলো অন্যদিকে যাই।" ঘটনাটা আর খুলে বললো না চৈতীকে। ওকে পাগল ভাবতে পারে। ঘুরতে
ঘুরতে ওরা একসময় বিখ্যাত চিত্রকর জয়নুল আবেদীনের গ্যালারিতে এসে উপস্থিত হলো। পুরো একটা গ্যালারি
জুড়ে জয়নুল আবেদীনের চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে। শ্বাশত গ্রাম বাংলার এঁতিহ্যবাহী কিছু চিত্রকর্ম রয়েছে
সেখানে। তুলির আঁচড়ে এতো সুনিপুণভাবে কেউ গ্রাম বাংলার এঁতিহ্য তুলে ধরতে পারে সেটা চোখে না দেখলে
বিশ্বাসই হবে না। একটা ছবির ওপর রায়হানের দৃষ্টি থমকে গেল। ছবিটা অনিন্দ্য সুন্দর। টেকিতে গ্রাম্য বধুর ধান
ভানার দৃশ্য। হঠাৎ করেই ছবিটা ওর কাছে জীবন্ত মনে হলো। টেকির ক্যাচিকৌঁচ শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ও।
কিছুটা ঘাবড়ে গেল রায়হান। কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি জেগে উঠলো ওর মনে। বেশিক্ষণ আর
ওখানে থাকলো না ওরা। বাইরে বেরিয়ে এলো। যাদুঘরের গেটের সাথেই লাইন ধরে ফুচকা আর চটপটির
দোকান। চৈতীর আবদারে ফুচকা আর চটপটি খেতে হলো ওকে। আরও কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে রাত সাড়ে
আটটায় বাসায় ফিরে এলো রায়হান। ক্লান্তিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। এরপর আয়েশ করে একটা সিগারেট
ধরালো। যাদুঘরের ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবছে। আগেও যাদুঘরে গিয়েছে ও। কিন্তু এরকম অনুভূতি কখনো হয় নি
। জড় বন্তগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওর চোখের সামনে ধরা দিচেছ। এটা কীভাবে সম্ভব? হ্যালুসিনেশন নয় তো?
ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল রায়হান।

পরের দিন সকালে সম্পাদক জহির সাহেবের ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো রায়হানের। “কি ভাই কিছু লিখতে
পেরেছেন?" আমাদের হাতে কিন্তু একদমই সময় নেই।” তাড়া দিল সম্পাদক। "না জহির ভাই, এখনো কিছু
লেখা হয় নি। দেখি কী করা যায়।" কিছুটা উদাসীনভাবে জবাব দিল রায়হান। “ভাই, আর মাত্র চারদিন বাকি
আছে। যা করার এরমধ্যেই করতে হবে।” সম্পাদকের কথা শুনে আবার দুঃশ্টিন্তাটা ফিরে এসেছে ওর মাথায়।
ভেবে কোনো কুলকিনারা পাচ্ছে না। নাস্তা সেরে একটা সিগারেট ধরালো। এরপর জামাকাপড় পরে রাস্তায়
বেরোলো। ওর বাসা পূর্ব রাজাবাজার। চিন্তাযুক্ত মনে সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে ফার্মগেট চলে এলো।
আনমনে একটা বাসে চেপে বসলো। ঘন্টাখানেক পরে বাসটা ওকে চিড়িয়াখানায় নামিয়ে দিল। কী মনে করে
টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় ঢুকে গেল রায়হান। এরপর গভীর মনোযোগ দিয়ে জীবজন্ত দেখতে লাগল।
ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত বোধ করল সে। একটা বানরের খাঁচার পাশে বসে বিশ্রাম নিল কিছুক্ষণ। বসে
থাকতে থাকতে ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। হঠাৎ মিহি গলার আওয়াজ শুনে ঝিমুনি ভাবটা কেটে গেল ওর। অবাক
হয়ে লক্ষ্য করল বানরেরা একে অপরের সাথে কথা বলছে এবং সেটা সে বুঝতে পারছে। একটা বানর আকাশ
দিয়ে উড়ে যাওয়া পাখিকে দেখে তার সঙ্গী বানরকে বলছে, "আহা, আমরাও যদি ওই পাখিটির মতো উড়তে
পারতাম কি মজাই না হতো, তাই না?"

সঙ্গী বানরটি জবাব দিল, "ঠিক বলেছিস। উড়তে পারার মজাই আলাদা। পাখি না হয়ে কেন যে বানর হয়ে জন্ম
নিলাম।”

এবার নড়েচড়ে বসল রায়হান। এটা কি তার মনের ভুল? নাকি সত্যিই সে জীবজন্তুর ভাষা বুঝতে পারছে!
বিষয়টা আরেকবার পরীক্ষা করার জন্য একটা সিংহের খাঁচার সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো সে। সিংহটি বসে
ঝিমোচ্ছে। রায়হানকে দেখে সিংহটি বলে উঠলো,

“প্লিজ ভাই, বিরক্ত করবেন না। এখন আমি ঘুমোবো।" সিংহটির কথা শুনে যারপরনাই বিস্মিত হলো রায়হান।
তার মানে, সত্যিই সে জীবজন্তুর ভাষা বুঝতে পারছে। দারুণ একটি অনুভূতি হলো ওর মনে। সেইসাথে কিছুটা
গর্বও অনুভব করল। পৃথিবীতে সে ই একমাত্র মানুষ যে জীবজন্তর ভাষা বুঝতে পারে।

প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে ওর। খাওয়ার জন্য একটাই মাত্র রেস্ট্রেন্ট এখানে। আইটেমও বেশি নেই। চিকেন
পোলাওর অর্ডার দিল রায়হান। সার্ভ করার সাথে সাথেই গোগ্রাসে খেয়ে ফেললো সব। খাওয়ার মান অনুযায়ী
দামটা অনেক বেশি। কি আর করা। সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে ওুর। খাওয়া দাওয়ার পরে একটা সিগারেট না
হলে চলে না। প্রতিদিনের অভ্যাস। কিন্তু ভেতরে ধূমপান করা নিষেধ। সেক্ষেত্রে চিড়িয়াখানার বাইরে যেতে হবে
ওকে। বহু কষ্টে তেষ্টাটা দমন করল। এরপর বিক্ষিপ্তভাবে এদিক সেদিক হাঁটল কিছুক্ষণ। সামনেই একটা খাঁচার
সামনে অনেক মানুষের ভিড় দেখে এগিয়ে গেল সেখানে। বেশ কয়েকটি ময়ূর আছে খাঁচায়। এরমধ্যে দু'টো
মধুর একটু আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে আছে। একটা পুরুষ আরেকটি মেয়ে। মেয়ে ময়ুরকে আকৃষ্ট করার জন্য
পুরুষ ময়ুরটি পেখম তুলেছে। অপার্থিব এক সৌন্দর্ষে যেন পুরো জায়গাটা আলোকিত হয়ে উঠেছে। লোকজন
ভীড় করে সেটা দেখতে এসেছে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ বা আবার ভিডিও করছে। এমন সময় সুরেলা একটা
কন্ঠ শুনতে পেল রায়হান।

“এই যে ভাই, আপনাকে বলছি। আপনি মনে হয় আমাদের ভাষা বুঝতে পারেন। দয়া করে এই লোকগুলোকে
একটু চলে যেতে বলবেন? লোকজনের যন্ত্রণায় নিরিবিলিতে প্রেম করতে পারছি না।" মেয়ে মঘুরটি রায়হানকে
উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছে। এবার আর অবাক হয় নি ও। কারণ সে তো সত্যিই পশুপাখিদের ভাষা বুঝতে
পারে। কিন্তু লোকজনকে এই কথা বলতে গেলে ওকে ধরে সোজা পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেবে। মন খারাপ করে
ওখান থেকে চলে এলো সে।

এরপর উটপাখির খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একটা উটপাখি ওকে দেখে এগিয়ে এলো।

“কি ভাই, মন খারাপ নাকি? মনটা তো আমারও ভীষণ খারাপ। পাখিরা কী সুন্দর উড়ে বেড়ায়। দেখে প্রাণ
জুড়িয়ে যায়। আমি শুধু নামেই পাখি। কিন্তু উড়তে পারি না। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু আছে?" মনের দুঃখ
প্রকাশ করছে উটপাখি। তাই তো, সত্যি কথাই বলেছে উটপাখিটা। বেচারা উড়তে পারে না। উটপাখির জন্য
সমবেদনা অনুভব করল রায়হান। ওখান থেকে কিছুদূর এগিয়ে গাধা দেখতে পেল সে। এদিকটায় তেমন ভিড়
নেই। কয়েকটি গাধা একমনে ঘাস খাচ্ছে। ওকে দেখে মনের দুঃখ প্রকাশ করল তারা। “সবাই শুধু আমাদেরকে
দিয়ে খাটায়। বুদ্ধিশুদ্ধি কম বলে গাধা নামে ডাকে। আমরা কি এমন দোষ করেছি বলতে পারেন?" কিছু বলল
নারায়হান। চুপচাপ চলে এলো ওখান থেকে।

অজগর সাপের খাঁচার দিকে এগিয়ে গেল এবার।

ওকে দেখে কথা বলে উঠলো সাপটা। তোমরা আমাদেরকে দেখে ভয় পাও। আমাদের সম্পর্কে মানুষদের
প্রচলিত একটা ভুল ধারণা আছে। তারা ভাবে আমরা বোধহয় খুব কুটিল। এটা ঠিক নয়। আমরা অনেক নিরীহ
প্রাণী। ষেচে কাউকে আক্রমণ করি না। আমাদের ওপর আঘাত এলেই কেবল পাল্টা আঘাত করি। আর
মানুষকে আমরা অনেক ভয় পাই। তাদের কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করি। মানুষের মতো এতো
কুটিল প্রাণী জগতে আর একটাও নেই। এই আমকেই দেখো। মানুষের কী ক্ষতি করেছি আমি? শুধু শুধু
আমাকে ধরে খাঁচার মধ্যে পুরে রেখেছে। কোনো মানে হয়?" সাপের যুক্তিগুলো অকাট্য। ভাবিয়ে তুললো
রায়হানকে।

সাপের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভাঙার সবচেয়ে বৃহৎ প্রাণী হাতিকে দেখার জন্য এগিয়ে গেল ও| হাতিকে
যেখানে রাখা হয়েছে সেই জায়গাটা বেশ বড়ো। মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিগুলো। সাথে দু'তিনটে বাচ্চা
হাতিও রয়েছে। অপার বিস্ময়ে মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। ভাবছে, এ আবার কেমন প্রাণী! দু'পায়ে
হেঁটে চলে? একটা হাতি দূর থেকে ডাক দিল ওকে। "ভাই, আমার একটা উপকার করবেন? আমার শুড়ের মধ্যে
কি ষেন একটা ঢুকে পড়েছে। পোকামাকড় হবে হয়তো। খুব যন্ত্রণা দিচেহ। কিছুতেই ওটাকে বের করতে পারছি
না। আপনি ষদি একটু সাহায্য করেন।" কথা বলতে বলতে এগিয়ে এলো হাতিটি। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল। রায়হানও
এগোলো সেদিকে। হাতিটি তার শুড় উচু করে রায়হানের দিকে বাড়িয়ে দিল। এরপর হঠাৎ এক ঝটকায় শুড়
দিয়ে পেঁচিয়ে ওকে রেলিংয়ের ভেতরে নিয়ে ফেলল। ঘটনার আকম্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেল রায়হান। হাতিটি
ওকে মেরে ফেলবে নাকি? ভীষণ ভয় পেল সে। দ্রুত সক্রিয় হলো এবার। মাটি থেকে উঠে জোরে দৌড় দিল।
বেশিদুর যেতে পারল না। একটা ইটে পা বেঁধে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছে। দরদর করে রক্ত
পড়ছে সেখান থেকে। এদিকে হাতিটি রক্ত হীম করা হাঁক ছেড়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার
নাম জপতে শুরু করল রায়হান। হাতিটি আর মাত্র কয়েক ফুট দূরে। আর রক্ষে নেই। এবার বোধহয় সত্যিই
মারা যাচ্ছে ও। এই সময় ঘুমটা ভেঙে গেল ওর। বিছানায় ধধড়ফড় করে উঠে বসল। সারা শরীর ঘেমে একাকার
হয়ে গেছে। তার মানে, এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে ও। ভয়ে বুকটা এখনো ধুকপুক করছে। কিন্তু একী! পা দিয়ে রক্ত
গড়িয়ে পড়ছে কেন? এটা যদি স্বপ্নই হবে তাহলে এই রক্ত এলো কোণ্খেকে? এর কোনো ব্যাখ্যা খুজে পেল না
রায়হান। ভয়ে ভয়ে রাতটা কোনোরকমে পার করে দিল।

পরের দিন সকালে বপ্পের বিষয়টা নিয়ে বিশ্লেষণের চেষ্টা করল ও। কিন্তু কোনো কুলকিনারা করতে পারল না।
রক্তের ব্যাপারটাই বেশি ভাবাচেহ ওকে। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। পুরো ব্যাপারটা ওর কাছে এতটাই জীবন্ত মনে
হয়েছে যে এটাকে শুধুই স্বপ্ন বলে মেনে নিতে পারছে না। ঘটনা যেমনই হোক, রায়হান তার গল্পের প্লট পেয়ে
গেছে। সারাদিন বসে গল্পটা লিখে ফেলল সে। গল্পের নাম দিয়েছে “পশুপাখিদের অজানা কাহিনি।” সন্ধ্যায়
গিয়ে সম্পাদককে দিয়ে এলো সেটা।

পনেরো দিন পর। সম্পাদক ফোন করে অফিসে ডেকে নিয়ে গেল ওকে। রায়হানকে দেখে হাত বাড়িয়ে
শেকহ্যান্ড করল। বিগলিত হাসি দিয়ে বলল, "আরে মশাই, আপনি তো ম্যাজিক দেখিয়েছেন একেবারে। হু হু
করে বিক্রি হচ্ছে বইটি। আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার কপি বিক্রি শেষ। আরও কপি
ছাপতে দিয়েছি। এই নিন আপনার বাকি টাকা। সাথে পরবর্তী উপন্যাসের জন্য এডভান্স।” একথা বলে একটা
পেটমোটা এনভেলাপ ধরিয়ে দিল ওর হাতে। টাকাটা হাতে নিয়ে একটা পরিতৃত্তির হাসি দিয়ে ওখান থেকে
বেরিয়ে এলো রায়হান। এরপর চৈতীকে ফোন দিল। আজকের দিনটা চৈতীকে নিয়ে সেলিব্রেট করবে।

 

জাহিদুল করিম তুহিন

ঢাকা, বাংলাদেশ।

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।