অনার্সে ভর্তি হবার পর থেকেই আশে পাশের মানুষগুলো কেমন বিয়ে বিয়ে করছিলো।অথচ আমি আর মা ছিলাম বিপক্ষে কিন্তু সেসবে বাবা দমেনি।বরং বছর কাটতে না কাটতেই বিয়ের তোড়জোড় লাগালো
এরপর বাবাও মনমতো ছেলে পেয়ে গেলো।প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ করার পর বিয়েটাও হয়ে গেলো।
অনয়ের পরিবার বেশ সম্ভ্রান্ত। অনয়ের রেস্টুরেন্টের ব্যবসা। এক ভাই এক বোন বাবা মা ছোট্ট সংসার। বাবা এসব দেখেই খুশি হয়ে রাজি হয়েছিলো কিন্তু মায়ের অনুরোধ ছিলো আমাকে যেন অন্তত গ্র্যাজুয়েশনটা কমপ্লিট করানো হয়।আসলে মায়ের স্বপ্ন ছিলো অামি শিক্ষিকা হবো।
আমার শ্বশুর শাশুড়ী এক গাল হেসে বললো চিন্তা করবেন না আমাদের বাসায় পিহুক তরীর(ননদের নাম)মতোই থাকবে। আমরাও মেয়েদের সাবলম্বী হওয়াতে সাপোর্ট করি।
পরীক্ষা শেষ করে বিয়ে হয়েছিলো বলে কিছু দিন পড়াশোনার চাপ ছিলো না।
অষ্টমঙ্গলা সেরেই হানিমুনে চলে যাই কক্সবাজার।
তারপর মামা শ্বশুর বাড়ি, মাসি শাশুড়ী, পিসি শাশুড়ীর বাড়ি মিলিয়ে প্রায় মাস দুয়েক ঘুরাফেরা হলো।
বিয়ের চারমাস পরে যখন বাবার বাড়ি থেকে আসার সময় বই আনতে নিলাম তখন অনয় বলল এবার থাক ব্যাগ ভারী হয়ে গেছে পরের সপ্তাহের অামি এসে নিয়ে যাবো।
তারপর পরের সপ্তাহে যখন বইগুলোর কথা বললাম তখন অনয় বললো এ সপ্তাহে কাজের চাপ বেশি।
আর অনলাইনে কোন ক্লাস দেখতে গেলেই বাসায় সবার যেন আমাকেই প্রয়োজন হয়।
তরী আমার একবছরের ছোট সে এবার অনার্সে ভর্তি হবে।
তারপর বলে বলে অনয়কে দিয়ে বাসা থেকে বই আনাতে পারলাম না তখন মা অামাকে দেখতে আসার নাম করে সব বই দিয়ে গেলো।
ব্যাগ থেকে বই বের করার পর শাশুড়ী মা বলতেছিলো এত বই এনে কি হবে পরীক্ষার আগে আনলেই হতো।
আর এখন তো ফোনেই পড়া যায়।
মা মন খারাপ করে চলে গেলো।
তারপর দিন পনেরো পরে বাসায় গেলাম অার বাসায় গিয়ে কলেজ গেলাম একটানা এক সপ্তাহ।
সপ্তাহ খানেক বাদে অনয় নিতে অাসলো।
তারপর আবারো সংসারে অাবদ্ধ হয়ে গেলাম।
অাস্তে রান্নার হাত পাকা হয়ে গেলো।
ততিনে পড়াশোনা আমাকে না ছাড়লেও আমি ছাড়তে বাধ্য গেলাম। রেস্টুরেন্টের অনেক রান্নার দায়িত্ব পড়লো আমার উপর।
তারপর পড়ার স্বপ্ন যখন ভূলতে বসেছি তখন একজন নতুন সদস্যের হাতছানি পেলাম।
দশমাস তাকে আনার যুদ্ধ করলাম বাড়িতে ঘোষণা হয়ে গেলো পিহুক অার পড়তে চায় না।অথচ আমাকে কখনো পড়তে দেওয়াই হয়নি।
প্রতিশ্রুতি ভূলে গেলো সবাই।
আমি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিলাম।
আমার গ্র্যাজুয়েশন অার সম্পূর্ণ হলো না।মায়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না।
কিন্তু তরী ততদিনে অনার্স কমপ্লিট করেছে ভালোভাবে।
তরীর বিয়ের কথা পাকা হবে অাজ।
নতুন অাত্মীয়রা আসলো সব ঠিক কিন্তু তাদের দাবি একটাই মেয়ে চাকরী করতে পারবে না কিন্তু আমার শাশুড়ী চেয়েছিলো মেয়েকে এতটা পড়ালো চাকরী না করলে হয়।
এদিকে তরী এ ছেলে ছাড়া বিয়ে করবে না তার ক্যারিয়ারের তেমন স্বপ্ন নেই।
বরং বিয়ে টাই অাসল।
আমার শ্বশুর-শাশুড়ীর ঘোর অাপত্তি বিয়ে দিবে না এখানে।
তরী পালিয়ে গেলো সেই ছেলের সাথে।
বিয়ে নিয়ে বেশ কথা চলছিলো কদিন ধরেই।
মা ফোন দিয়ে শুধু একটা কথাই বললো কারো স্বপ্ন ভেঙে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার সাহসিকতা সৃষ্টিকর্তাও মেনে নেয় না।
কাউকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখতে হয়।
ফোন রেখে মেয়েটার দিকে তাকালাম সে শুয়ে শুয়ে পা নাচিয়ে খেলছে বুকে জড়িয়ে ধরলাম বললাম মা রে তোকে অন্তত আমি হেরে যেতে দিবো না।
আমার শ্বশুর শাশুড়ী দেখতে আসার দিন বলেছিলো তারা মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়াকে সাপোর্ট করে কিন্তু আমি তো ছিলাম বউ তাই আমাকে সাপোর্ট করতে পারেনি।
~স্মৃতিকথা দত্ত
Comments (0)