-মা এবার সত্যিই অসুস্থ হয়ে গেছে? মিথ্যে বলছো নাতো বাবা?
মনির সাহেব আমতা আমতা করে বলল,
-তোর মা সত্যিই অসুস্থ। তোরে একবার দেখতে চাইতাসে।
-বাবা, দেখো আমার কাজ করতে হয় শহরে। আরো কয়েকবার মা আমাকে মিথ্যে অসুখের কথা বলিয়ে নিয়ে গেছে। বাসায় গিয়ে দেখি মা সম্পূর্ণ ঠিক।
-তুই বিশ্বাস কর বাবা এবার সত্যিই অবস্থা গুরুতর।
-আচ্ছা আমি পরে জানাচ্ছি।
ফোনটা রাখতেই আমরিন বললেন,
-কি বলল তোমার ছেলে?
-তোমার জন্য বারবার মিথ্যে বলতে হচ্ছে। এটা কিন্তু আমার ভালো লাগছে না।
-আমার বা তোমার অসুখের কথা না শুনা ছাড়া তো ও তো গ্রামে আসে না। ওকে দেখতে ইচ্ছা করে অনেক।
-এবার কোন অসুখের বাহানা বানাবে?
-টিবি।
-কয়েকদিন ধরে দেখছি তুমি কাশছো খুব। তোমার সত্যি সত্যি...
মনির সাহেবের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো। আমরিন তখন হেসে বলল,
-আগে থেকেই অনুশীলন করছি। এবার যেন ধরা না পড়ি বুঝলে।
-আচ্ছা।
মনির হোসেনের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে তিনি তার স্ত্রীর এই মিথ্যে অসুখের অভিনয় টা পছন্দ করছেন না। তবুও সায় দিচ্ছেন। কালকের মধ্যেই হয়ত তার ছেলে পৌঁছে যাবে।
সকাল থেকেই খুব কাশি হচ্ছে আমরিনের। মনির সাহেব একটু হেসে বললেন,
-এখন থেকেই এত অভিনয় করতে হবে না। আগে তোমার ছেলে আসুক।
কাশতে কাশতেই তিনি একটু হাসলেন। এরপর বললেন,
-এবার আর ছেলের কাছে ধরা পড়লে চলবে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি কাশতে থাকো।
-হু।
এরপর তিনি মাচা তৈরির কাছে মন দিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার কাছে আমরিনের কাশিটা অস্বাভাবিক লাগতে লাগলো। মনে হচ্ছে তার স্ত্রীর সত্যিই খুব কষ্ট পাচ্ছেন। আর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা তার। এত পাকা অভিনেত্রী তো তার স্ত্রী না।
তিনি কিছুক্ষণ তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর দৌড়ে তার স্ত্রীকে ধরলেন।
-তোমার কি সত্যিই কষ্ট হইতাসে?
-আরে না, আমি ঠিক আছি।
-তুমি ঠিক নাই। ডাক্তারের কাছে চলো।
-না। আগে খোকা আসুক। ওরে ফোন দাও।
মনির হোসেন তার ছেলেকে ফোন দিলেন।
-তুই রওনা দিসোস বাবা?
-না বাবা। একটু কাজ পড়ে গেছে।
পাশ থেকে মায়ের কাশির শব্দ শুনে তার ছেলে বলল,
-মা এবারেও অভিনয় করছে। তাইনা? আমি আসবো না বাবা।
-খোকা..তোর মা সত্যিই...
বাবাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে খোকা ফোন কেটে দিলো। আমরিন এখনও কাশছেন। মনির হোসেন তাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন।
পানি খেতে গিয়ে গ্লাসটা রক্তে ভরে গেল।
(সমাপ্তি)
অরণী মেঘ
Comments (0)