Search

গল্পঃ নিখিল গোলারটেক রকেট পুনর্বাসন ও কল্যাণ সমিতি

  • Share this:

মেজোখালু চাইতেন তার ছেলে নাসায় চাকরি করবে। এর জন্য তিনি ছেলেকে খুব যত্ন নিতেন। তার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (আই আই টি) তে ভর্তি করার। কারণ বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপরে তার ভরসা ছিল না।

হুমায়ূন আহমেদ স্যার যেমনটা বলতেন, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। খালুর স্বপ্নকে পূরণ করতে খালাতো ভাই অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। সে আই আই টিতে না পড়লেও বাংলাদেশের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। নাসায় চাকরি না করলেও আমেরিকারই এক বিখ্যাত ইলেকট্রনিক চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।

আচ্ছা খালু কি জানেন, নাসার বিকল্প তৈরি হয়ে গেছে? সেটা হচ্ছে স্পেস এক্স। স্পেস এক্স এর মালিক এলন মাস্ক।

নাসা যে খরচে মহাকাশে যান পাঠায় তার চেয়ে বহু কম খরচে নভোখেয়া পাঠাতে চান মাস্ক। নাসার খরচ বেশি হয়, কারণ তাদের বানানো রকেট পুনরায় ব্যবহারযোগ্য না। আর এলন মাস্কের দাবী তার কোম্পানির বিজ্ঞানিরা পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন রকেট বানিয়ে ফেলেছেন।

নাসার রকেট কখনো পৃথিবীতে ফেরত আসে না যদি না দুনিয়ার মায়া কাটানোর আগেই তাদের ফুয়েল শেষ হয়ে যায়। ফুয়েল শেষ না হলে সেটি একসময় মহাকাশে হারিয়ে যায়। হয়তো টুকরো টুকরো হয়ে অনন্তকাল ভেসে বেড়াবে মহাশূন্যে।

ইতিহাসের তিন বিখ্যাত আপেলের একটি নিউটনের মাথায় পড়েছিল। বাকীদুটোর একটা বাবা আদম খেয়েছিলেন; আর একটা স্টিভ জবসের আইফোনের পেছনের সেই আধখাওয়া আপেল।

আচ্ছা, মাথায় না পড়ে আপেলটা তো আকাশেও চলে যেতে পারতো। সেটা হয়নি কারণ, অভিকর্ষ বল।

কোনো বস্তুকে ওপর ছুড়ে দিলে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে বস্তুটি ভূমিতে পড়ে। এই প্রভাব কাটাতে পারলেই কোন বস্তু মহাকাশে ছুটে যাবে। হিসাবটা হচ্ছে, ১১.২ কিমি/সেকেন্ড উর্ধ্বমুখী বল। রকেট সায়েন্সের মূল কথাই এটা। নিউটন সাহেবের মাথায় আপেল না পড়লে এ সূত্র আবিষ্কার হত না।

তবে রকেট না ফিরলেও মহাশূন্যচারীদের বহন করা স্পেসক্রাফট পৃথিবীতে ফিরে আসে। টিভিতে আমরা যেভাবে দেখি, মহাকাশে যখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয় তখন এর সঙ্গে দুটি বুস্টার রকেট এবং একটি মেইন রকেট লাগিয়ে দেয়া হয়।

বুস্টার রকেট পৃথিবীর গ্র্যাভিটি থেকে রকেটকে উপরে তুলতে সাহায্য করে এবং যখন এর ফুয়েল শেষ হয়ে যায় তখন রকেট দুটি ইঞ্জিন থেতে আলাদা হয়ে যায়, মাটিতে খসে পড়ে।

এরপর কাজ শুরু হয় মেইন রকেটের। স্পেস ক্রাফটকে স্পেসে নিয়ে যাওয়ার পুরো দায়িত্ব থাকে এই রকেটের।

সম্প্রতি দুর্ঘটনার শিকার চীনা রকেটও এসবকিছু ধরে নিয়েই বানানো হয়েছিল নিশ্চয়ই। তবে "চায়নার মাল টিকে না" এর সার্থকতা প্রমাণ করে এটি ভেঙে পড়েছে মালদ্বীপের কাছে সমুদ্রে। এটি ভূপৃষ্ঠের কোথায় পড়বে এই নিয়ে গত কিছুদিন ধরে তুমুল জল্পনা কল্পনা চলছিল।

এ ব্যাপারে আগ্রহ ছিল মিরপুর দারুসসালাম এলাকাবাসীরও।তারা মনে করেন, মালদ্বীপে না পড়ে সেটি পড়তে পারতো তাদের গোলারটেকের মাঠেও। বেশ বড় মাঠ ছিল। 'গোলারটেক' নামের প্রতি সুবিচার করতে এখানেই গোলা পরা উচিত ছিল। এমনিতে গোলারটেক মাঠের ধারণক্ষমতা ভাল।

মুরুব্বিরা নিরাপত্তার দিকেও চিন্তা করেছিলেন। পাশেই দারুস সালাম থানা রয়েছে। পুলিশি পাহারায় রাখা যাবে রকেটের ধ্বংসাবশেষ। থানায় আটক করা গাড়িগুলো দীর্ঘদিন আটক থাকতে থাকতে সব ভেঙেচুরে গেছে। এগুলোর সাথে একটা ভাঙা রকেট যুক্ত হলে নিশ্চিত এলাকার সুনাম বাড়তো।

রকেট ভেঙে পড়া উপলক্ষে সেখানে ইফতারি বাজার, ঈদের কাপড় বিক্রির অস্থায়ী দোকান দেয়ারও প্ল্যান ছিল অনেকের।

তবে কিছু রিয়েল ধান্দাবাজ লোকজন ভাবছিল কিভাবে ভাঙা রকেট পরে চীনা বন্ধুদের ফেরত দেয়া যায় অথবা ফেরত দেয়া নিয়ে একটা সমঝোতা করা যায়। চীনাদের হাতে তো অনেক টাকা।

আফসোস এবার আর হল না।

তবে আশার কথা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে এখন এমন দুইশ স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, যেগুলো আবর্জনায় পরিণত হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে 'টাইম বোমা'র মত বিস্ফোরিত হয়ে পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে।

সেক্ষেত্রে কিন্তু গোলারটেকের একটা চান্স থেকেই যায়। এব্যাপারে চীনাদের সাথে কথা বলতে লকডাউনের পরেই চীনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন সাত সদস্যের একটা শক্তিশালী নির্বাচিত কমিটি।

কমিটির নাম "নিখিল গোলারটেক রকেট পুনর্বাসন ও কল্যাণ সমিতি"।

#শরিফ_হাসান

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।