শীতকাল তখন জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে প্রচুর ৷ অর্নবের দুরসম্পর্কের এক ভাই রমেন বর্ধমানে থাকে৷
রমেনের অর্ধাঙ্গিনী অর্নবকে সব সময়ে ফোনে জ্বালাতন করতো কারণ বৌদির প্রবল ইচ্ছে অর্নব
কিছুদিনের জন্য বর্ধমানে আসুক। বৌদিটা আর কেউ না সে হলো অর্নবের ছোটবেলার বান্ধবী ্রিয়াঙ্কা।
কাজের সূত্রে অর্নব আর রমেন বিহারে থাকতো। অর্নবের বান্ধবিটার সাথে প্রায় 5 বছর চুটিয়ে প্রেম করেছে
তার ভাই রমেন। ভগবানের কৃপায় শেষ পরিণতি চার হাত এক হলো বিয়ে হয়ে। এখন ভাই রমেনের
ট্রান্সফার বর্ধমানে সেই জন্যে বৌদি এত জ্বালাতন করতো তার প্রিয় বন্ধু অর্নবকে আসার জন্য। অর্নবের
বয়স ৩০ অবশ্য এখনো বিয়ে করেনি উপযুক্ত জীবনসাহী না পাওয়ায়। তবে অতি শীঘ্রই হয়তো চার হাত
এক হতে পারে।
রমেন আর তার বৌয়ের (বোন্ধবী) অনুরোধের জন্য অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিলেন অর্নব। বিকেল
বেলায় ফোন করে ওদেরকে বললো- “আমি আগামিকালই আসছি"। যাক সব দিক বিবেচনা করে ঠিকঠাক
করে গুছিয়ে নিয়েছিল জিনিস পত্র। ভেবেছিল বিকেলের মধ্যেই রওনা দেবে। কারন একেতো শীতকাল
তার উপর রাতের বেলাতে প্রচুর ঠান্ডা। গাড়ির ড্রাইভারকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে "আজ
সকালেই বর্ধমান রওনা হচ্ছি"। সকালের খাবার খাওয়ার পর বেরোনোর ঠিক কিছুক্ষণ আগে অর্নবের মা
অর্নবকে ষথারিতী সাবধানতার উপদেশ বানী দিতে লাগলো। সাথে একটা লাল রং-এর মাদুলীও দিল। অর্নব
কিছুটা অবাক হয়ে গিয়ে তাঁর মাকে বললো “ মা তুমি না সেই আগের মতো কুসংস্কার মানুষ হিসেবেই
রয়ে গেলে, এসব তাবিজ-ধাগা কি কেও এখন বিশ্বাস করে??
জন্য" ।
কি আর করা যাবে মায়ের আদেশ অর্নবকেতো মানতে হবেই। তাই এটা সাথে করে সব কিছু জিনিসপত্র
গুছিয়ে নিয়ে অর্নব তার গাড়িতে উঠলো। ঘড়িতে বাজে দুপুর ২.০০টো। বিহারের শহরের কোলাহল থেকে
বেশ খানিকটা দুরে চলে গেছিল এমনিতেই শীতের দিন তার উপর এই লং ড্রাইভ, বেশ মজাদার সফর
করে দিচ্ছে বটে। ড্রাইভারের পাশের সিটেই অর্নব বসেছিল। পুরো গাড়ীতে অর্নৰ আর ড্রাইভার ছাড়া
কেউ নেই। মাঝে মাঝে ড্রাইভারের সাথে কথা হচ্ছে আর দ্রুত গতি নিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি। ড্রাইভার
ঘন্টাখানেক পর একটি গান চালিয়ে মন দিয়ে শুনতে লাগলো। ঠিক ওই সময় অর্নবের ফোনটা বেজে
উঠলো। মেজ বোন কঙ্কনার ফোন। অর্নব মুদু রে বললো “হ্যালো কম্কনা বল".. আনন্দিত ষরে তার বোন
বললো “ভাইয়া তোরা কতদূর এখন, একা যেতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো? অর্নব তার বোনের প্রশ্নের
জবাব হিসেবে বললো,” আরে না, চিন্তা করিসনা, পৌছে গিয়ে ফোন করবো। আর বাবাকে একটু বুঝিয়ে
বলেদিস ছেলে ভালো আছে কোনো অসুবিধা হয়নে "। তারপর অর্নব রাখি বলে ফোনটা কেটে দিল। হটাৎ
অর্নবের চিন্তাধারাটা একটু পাল্টে গেল বিচিত্র অনুভূতি জাগতে লাগলো মনের মধ্যে। বিরবির করে
আবোল তাবোল নিজের মতোই বকতে লাগলো। দ্রুত গতিতে ছুটে চলা গাড়ীর শো শো শব্দে নিজেই
নিজের মনে একটা গান করতে লাগলো। শো শো করে ছুটন্ত গাড়ীর শব্দ, আর রাতের আকাশের ঝিকি
মিকি তারা সাথে হালকা কুয়াশা পরিবেশটা যেন আরো সোন্দর্ষময় করে তুলেছে। চোখের পাতায় অনেক
কিছুই ভেসে আসছে অর্নবের। রাত ?টা বাজতে না বাজতেই ড্রাইভার বলে উঠলো-" স্যার আমরা এখন
নদী পার হবো"!
সমস্ত ব্যাগ জিনিস পত্র গুছিয়ে নিয়ে তারা দুজনেই নৌকায় উঠলো। সাথে তার গাড়িটা নির্দিষ্ট জায়গায়
রেখে দিল। কিছুসময় পরে মাঝরাতে জোতমা ভরা চাঁদনী রাতে এই নদীর জল যেন অপরুপ সৌন্দর্যে
ভোরে উঠলো। ড্রাইভার বলে উঠলো মিষ্টি গলায় "স্যার দেখছেন কত সুন্দর লাগছে চাঁদ আর নদীর জল
টাকে"।
নদীপথ শেষ হওয়ার পরেই গাড়িটি নিয়ে বেরিয়ে পরলো দুজনে। তখন প্রবল বেগে বর্ধাঘাতসহ ভারী বৃষ্টি
হচ্ছে চারিদিক নির্জন কোনো গাড়ী নেই আস্তে আস্তে গাড়ি চলতে থাকলো, কিছু দুর পর পর একটা দুটো
গাড়ীর হলুদ-সাদা হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। অর্নবের আবার রাত জাগা অভ্যাস নেই তার চোখের পাতা
ক্রমশ ঝিমিয়ে যাচ্ছে, গাড়ীর সিটেই হেলান দিয়ে শুয়ে পরলো চোখ বন্ধ করে। আর বৃষ্টির দিনে আমরা
সবাই জানি যে রাতের ঘূমটা বেশ ভালোই হয় তার সাথে গাড়ির মধ্যে যাওয়ার অনুভূতিটাই আলাদা।
উল্টে পড়ে যাবে যাবে অবস্থা। তখনই অর্নবের চোখটা খুলে যেতেই রেগে গিয়ে ভারী কণ্ঠে ড্রাইভারকে
বলে উঠলো "এই...কি হয়েছে ?? এত জরে কি গাড়ির ব্রেক মারে কেউ ড্রাইভার বলে উঠলো " স্যার
আমার দোষনা, একটা মহিলার জন্য আমাদের এই অবস্থা ওনার জন্যই সব কিছু"। এবার অর্নব গাড়ির
সামনে ভালো করে লক্ষ করে দেখে একজন ২৫ থেকে 30 বছরের মেয়ে একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে
দাড়িয়ে আছে। অর্নব একটু ভীতু স্বভাবের ছিল সেই সময় ওই পরিস্থিতিকে ভয় না করে একটা হালকা
সাহস জন্মালো মনে।
ঘড়িতে বাজে তখন রাত আরাইটে। মেয়েটির শাড়ীর রং টা ছিল সাদা সাথে কপালে একটা বড়
লাল রংয়ের টিপ পরে আছে। মেয়েটির আঁচলের এক অংশ মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ঘনকালো চুল
গুলো ছিল এলোমেলো আর দু চোখ দিয়ে অঝোরে কান্না বেরিয়েই ষাচ্ছে। অর্নব তার ড্রাইভার কে বললো
ব্যাপারটা আমি দেখে আসছি তখন ড্রাইভার আতঙ্কিত চেহারা নিয়ে ভয়সূচক কণ্ঠে বলে উঠলো "না স্যার
আপনি যাবেন না আমি ব্যাপার টা দেখছি “| তখন অর্নব বলে উঠলো " তুমি গাড়িতেই থাকো তোমাকে
চিন্তা করতে হবে না আমি দেখছি “| ছাতাটাকে নিয়ে গাড়ির দরজাটা আত্তে করে খুলে নিচে নেমে অর্নব
বললো- “কি ব্যাপার, আপনি কে? কোথায় থাকেন? কি আপনার পরিচয়? হঠাৎ করে একটা বাচ্চা কোলে
আমাকে বাঁচান, আমার স্বামী হয়তো আমাকে আর আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি কোন মতে
অনেক দূর থেকে কষ্ট করে বাড়ী থেকে কাউকে না বলে পালিয়ে এসেছি, তাছাড়া কিছুটা গেলেই আমার
বাবার বাড়ি"!
আপনার গাড়িতে নিয়ে চলুন"। তখন অর্নব বলে বসলো- “দেখুন আপনি পথ থেকে সরে যান, আমি
অচেনা কাউকে আমার গাড়িতে নিতে পারবো না। এই কথাটা বলার সাথে সাথেই মেয়েটি তার বাচ্চাটাকে
সাথেনিয়ে অর্নবের পায়ে ধরলো। ড্রাইভার ওপাশ থেকে বলে উঠলো- “স্যার আমাদের গাড়ির পিছনের
সিটটা তো খালি পরে আছে, আমরা না হয় এই ঝড় জলের রাতে এই বিপদ থেকে মেয়েটিকে একটু
সাহাষ্য করি'। অর্নব প্রথমে না না করার পর ড্রাইভারের অনুরোধ দেখে রাজি হলো। আর অর্নব মনে মনে
ভাবল 'সামনেই তো ওর বাবার বাড়ি ওখানেই ওকে নামিয়ে দেবো, তখন আর কোনো ঝামেলা থাকবে না
নিশ্চিন্তে আমরা আমাদের পথে রওনা দিতে পারবো। অর্নব মেয়েটিকে গাড়ীতে উঠতে বললো। মেয়েটি
হালকা হাসি হেসে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পিছনের সিটে উঠে বসলো।
ঝরজলের রাতে গাড়ি আস্তে আস্তে কিছুক্ষন চলতেই থাকলো। অর্নব আর তার ড্রাইভার ভুলেই গেছিল ষে
পিছনে কেউ বসে আছে কারণ ঘখন থেকে গাড়িতে মেয়েটিকে ওঠানো হয়েছিল তখন থেকে একবারের
জন্য পিছন ফিরে তাকানো হয়নি। হঠাৎ করেই অর্নবের মনে হলো মেয়েটিতো বলেছিল কিছুদুর পরেই
নামবে তা এখনো কেন মেয়েটি বললো না থামার কথা। অর্নব গাড়ির আয়নার দিকে চেয়ে দেখার চেষ্টা
করলো মেয়েটির কি তা অবস্থা দেখার জন্য। কিন্তু আয়নার ভিতরেতো কোনো কিছুই দেখা যাচেহুনা। অর্নব
একটু ভালো ভাবে আয়নার দিকে চোখ দিয়ে দেখলো দুটো লাল চোখ দেখা যাচ্ছে৷ কিছুক্ষন পর দেখতে
পেলো মেয়েটি তার কোলের বাচ্চাটার গলা টিপে ধরে বসে আছে। এই অবস্থাতে অর্নব আর তার ড্রাইভার
রামু ঘামতে শুরু করেছিল। হটাৎ দেখে মেয়েটি বাচ্চাটির দুটো পা কামড়াতে লাগলো। রক্তের বন্যা বয়েই
চলেছে। মেয়েটির লাল চোখ আর অদৃভূত দৃষ্টি কি ষে ভয়ংকর, বলে বোঝানো যাবেনা কাউকেই। ড্রাইভার
কোনোরকমে ভয়ে ভয়ে আপন মনে ড্রাইভ করে চলেছে। অর্নব-এর বুকের ভিতরটা যে কি হচ্ছে সেটা ও
ছাড়া আর কেউ জানতেও পারবে না,অর্নব দেখলো এক অতি ভয়ংকর দৃশ্য বাচ্চাটির মাথার দিকটার
মুখের মাংসগুলো খেতে শুরু করেছে মেয়েটি। মুখে রক্তের লালা ঝরছে অনবরত। অর্নব যে আয়নাতে এই
সব ঘটনাটা দেখছে তা হয়তো মেয়েটি এখনো সেটি খেয়াল করেনি। অর্নব ভাবতে শুরু করলো যে- "এই
দৃশ্য দেখে ড্রাইভারকে ঘদি এখন থামতে বলি তাহলে কিছু একটা মর্মান্তিক অঘটন ঘটে যাবে।”
হঠাৎ করেই আয়নাটির ভিতরে তার লাল চোখে চোখ পড়ে যায়। রক্তের লালা জড়ানো চেহারা নিয়ে
মেয়েটি দুজনের দিকে তাকায়।
তারপর চোখের নিমিষে মুহূর্তের মধ্যে ঘটলো একটা বড় অঘটন ....
ভোরের আলো ফুটতেই তাদের জ্ঞান ফেরে তাদের অবস্থা আগের মতো ওতোটা ভালো ছিল না,অর্নব
দেখলো তাদের গাড়িটা ভেঙে চুরমার । হয়তো কোনো গাছে খুব জোরে ধাক্কা মেরেছিল তারপর কি
হয়েছিল তাদের তা মনে নেই। অর্নব রামুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। তা দেখে
অর্নব খুব ভয়ে পেয়ে গেছিল সে কিছুই বুঝতে পারলো না যে সে কি করবে। অর্নব উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো
গোটা রাস্তাই ফাঁকা নির্জন কেউ কোথাও নেই কয়েকটা ঘর দেখা যাচ্ছে তাও আবার সেখানে কেউ নেই।
খুবই কম কিছু মানুষ জন রাস্তার ধার দিয়ে যেতে দেখতে পায়। অর্নব তাদেরকে হাঁক দিলো - "ও দাদা দাদা
ও দাদা শুনতে পারছেন ও দাদা আমরা খুব বিপদে পরেছি।”
ডাকতে ডাকতে কিছুক্ষণ পর বছর 60 এর একজন বৃদ্ধ লোককে দেখতে পেলো অর্নব।
বৃদ্ধটিকে কেমন যেন অদ্ভূত দেখতে গায়ে একটা সাদা গেঞ্জি আর একটা ময়লা ধুতি চুল গুলো ছোটো
ছোটো, মুখে বলিরেখা ।
অরপর অর্নব বৃদ্ধাটিকে ডেকে উঠলো-" দাদু ও দাদু একটু আসবেন আমরা খুব বিপদে আছি।” বৃদ্ধ
লোকটি অর্নবকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বললো -“বলো বাবা এই সময় এই অবস্থায় এখানে : কি
হয়েছে
অর্নব বৃদ্ধ লোকটিকে বললো -“দাদু আমরা বিহার থেকে বর্ধমান যাবার জন্য রওনা দিয়েছিলাম পরিস্থিতি
তখন ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু তখন প্রায় রাত ১.৩০ -২.০০টো বাজে গাড়ি নিয়ে যেতে যেতে একটি মেয়েকে
চোখে পরে ,মেয়েটির সাথে কোলে একটি বাচ্চা ছিল সাহায্যের জন্য অনুরোধ করায় আমি তাদের গাড়িতে
বসাই কিন্তু তারপর যা ঘটলো তা কল্পনার বাইরে ভয়ঙ্কর একটা দৃশ্য মেয়েটি কি আদেও মেয়ে ছিল নাকি
অন্য কেউ? আমরা বুঝে ওঠার আগেই সব কিছু চোখের নিমিষে শেষ হয়ে যায় আর ভোরে চোখ খুলে
দেখি গাড়িটি গাছে ধাক্কা লেগে গেছিল।”
বৃদ্ধ লোকটি অর্নবকে প্রশ্ন করলো -" তোমরা কি কেউ ওর নাম জেনেছো?” অর্নব বললো -“তা জানতেই
হয়ে প্রশ্ন করলো -“ আপনি দাদু কিভাবে জানলেন? হ্যা আমার কাছে মায়ের দেওয়া একটা মাদুলী আছে।"
বৃদ্ধ লোকটি অর্নবের গায়ে হাত বুলিয়ে বললো -" চিন্তা করো না বাবা ভয় কেটে গেছে আজ তুমি বেচে
আছো এটা খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা কারণ ওই রাস্তাটি ছিল অভিশপ্ত আর ওখান থেকে রাতে যারা আসে
তদের মধ্যে কেউই আর বেঁচে থাকে না।”
আমরা সবাই জানি যে অর্নব ছিল একটু ভীতু প্রকৃতির মানুষ আর সেই সময় যেন তার মনের মধ্যে
অদ্ভূত একটা শক্তির সঞ্চার ঘটেছে। তাই সে সেই ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে থাকলো
বৃদ্ধ লোকটির সাথে। অর্নব বুদ্ধ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলো -“ দাদু ঘটনার সূত্রপাত টা কিভাবে শুরু
হয়েছে একটু বলবেন?কেন আজ সেই রান্তা অভিশপ্ত সেই রাত অভিশপ্ত:"..বৃদ্ধ লোকটি মুচকি হেসে
বললো-“বাবা এত কিছু জানার কি দরকার যখন বেঁচেই গেছ এখন তোমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া
উচিত।” অর্নবটা ছিল একটু জেদি প্রকৃতির মানুষ কোনো কিছু জানার থাকলে তা না শুনে কোথাও যাবে না
।
তাই সে এই অজানা ঘটনার বিষয়টি না জেনে সে কোথাও যাবে না বলে গুমরে বসে পরলো বৃদ্ধ লোকটির
কাছে। আর অনুরোধপূর্বক বাক্যের সাথে বলে বসলো -“দাদু আপনি শুরু করুন আমি এটি না জেনে না
শুনে কোথাও যাবো না।"
বৃদ্ধ লোকটিকে অনেক করে অনুরোধ করায় উনি বলতে শুরু করলেন -" সময় টা ছিল বহুকাল আগের
মেয়েটির নাম ছিল সুম্মিতা ওর পরিবারে ছিল বাবা,মা, দাদু আর ঠান্মা ছোটো বেলায় মারা গেছিল। একটি
গ্রামের একজন গোয়ালার ছেলে । যথারীতি ওদের বিয়ে হয়ে যাবার পর পারিবারিক দিক ভালোই চলছিল ।
কালুর ইচ্ছে ছিল একটা মেয়ে জন্ম নিক কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরে গিয়ে ছেলের জন্য নিলো। ব্যাস তারপর
থেকে শুরু হলো পারিবারিক অশান্তি। বছর বছর কেটে যাওয়ার পর অশান্তি আরো ভয়ানক রূপে
পরিবর্তন হলো। কালু দিনের পর দিন মেয়েটির ওপর শারীরিক অত্যাচার করতে শুরু করলো। একদিন
গিয়ে প্রচুর পরিমানে অশান্তির কোলাহল সৃষ্টি করে ৷ আর টাকা পয়সা না দেবার জন্য কালু সুশ্মিতার
বাবাকে হত্যা করে দেয়। তারপর এই খবরটা ছড়িয়ে ঘাতে না যায় তার জন্য বাবার লাশ টাকে অন্য
কোনো এক নির্জন জায়গায় মাটি চাপা দিয়ে চলে যায়। তারপর যা ঘটলো তা খুবই বেদনাদায়ক
সুম্সিতার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে করতে দরজা বন্ধ করে রেখে দেয় সাথে ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েটাকেও
তর সাথে আটকে রেখে দিল। তাদের পেটে জল টুকুও পড়লো না দিনের পর দিন মাসের পর মাস সুস্মিতা
আর তার মেয়ে ছটফট করতে থাকলো। একদিন ঘটলো এক অদৃভুত ঘটনা কালু ওদের দেখার জন্য দরজা
খুললো আর খুলেই চোখ মাথায়, ভয় পেয়ে গিয়ে দেখতে পেলো তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই মুখে রক্তের লালা
ঝরছে অত্যাধিক খুদার জন্য নিজের মেয়ের শরীরের মাংস গুলো খেয়ে ফেলেছিল । এই দেখে কালু
সামাজিক লজ্জার ভয়ে তাদের মাটি চাপা দিয়ে দিল সেই রাস্তায় যেখানে তোমাদের সাথে ঘটে ছিল এক
অদৃভূত ঘটনা । তারপর থেকে কেউ আর এদের খবর জানে না তারা কে কে আজও বেঁচে আছে না মরে
গেছে তবে কালুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। তাই হয়তো সেই মেয়েটির আত্মা ফিরে এসেছে প্রতিশোধ
নেওয়ার জন্য”
অর্নব এই ঘটনা শুনে তো অবাক হয়ে গেল আর সে বললো -"বুঝলাম কিন্ত সুম্মিতার বাবার খবর কি
পাওয়া গেছিল:... হটাৎ অর্নবের মনে পরে গেল তার "ড্রাইভার রামু বেইশ হয়ে পরেছিল তার খবর তো
আর নেওয়াই হলো না।" অর্নব দৌড় দিল রামুর অবস্থা দেখতে যাবার জন্য গিয়ে দেখলো রামুর একটু জ্ঞান
ফিরেছে যাক অর্নব-এর একটু হলেও শান্তি জাগলো মনে। এবার তারা দুজনেই কোনো রকম ভাবে কাঁধের
ওপর একে অপরের হাত রেখে চললো সেই বৃদ্ধ লোকটির কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য যাতে একটি গাড়ির
ব্যাবস্থা হয়ে যায়। অর্নব কিছুটা দূর গিয়ে দেখলো বৃদ্ধ লোকটি আর নেই চারিদিক নির্জন কোনো কোথাও
কেউ নেই কাউকেই দেখা গেল না। অর্নব কিছুটা ভয় পেয়ে গেল মনে মনে ভাবতে লাগলো " দাদু কোথায়
গেল ...দাদু টার নামটাই জানা হলো না, কে ছিল ওই দাদু ||
তারপর তারা কিছুক্ষণ পর দেখতে পেল একটি চার চাকার ভ্যান গাড়ি তাদের দিক দিয়ে যাচ্ছে দেখতে
পেয়েই দাঁড় করালো
ভ্যান গাড়ির লোকটির নাম হলো পাঁটু।
পাঁটু তাদের দেখতে পেয়ে গাড়িটি দাঁড় করালো তাদের জিজ্ঞাসা করলো -“বাবুরা কোথায় যাবেন?” অর্নব
বললো- “বর্ধমানের খান পাড়াতে যাবো ওখানে আমার এক ভাইয়ের বাড়ি আছে সেইখানেই আমরা যাবো
তাই যদি আপনি ওই জায়গায় ছেড়ে দেন খুব ভালো হয় তাতে আপনি যা টাকা নেবেন দিতে রাজি।"
পাঁচু বললো - “ বাবুরা চিন্তা করবেন না টাকা পয়সা নিয়ে ভাববেন না আপনাদের যা পরিভ্তিতি দেখছি
তাতে আমি ভালো মতোই বুঝে গেছি আপনাদের সাথে কি ঘটেছে । তাই আমি আপনাদের এখন থেকে
নিয়ে যাবো।"
অর্নৰ আনন্দিত হয়ে বলে উঠলো -'ধন্যবাদ মশাই আপনি ভগবানের দান আপনি ঘদি আজ না আসতেন
আমরা হয়তো এ যাত্রায় নিজেদের লক্ষ্যে পৌছাতে পারতাম না।”
তরপর গাড়ি চলতে শুরু করলো। যেতে যেতে পাঁটু ঘটনাটিকে নিয়ে আলোচনাও করতে শুরু করেছিল।
কিছু ঘন্টা পর রমেনের বাড়ির গেটে নামলো। অর্নব পাঁচুকে বলে উঠলো -“মশাই কালকের
ঘটনাষে ঘটলো কিন্তু ভোর বেলায় ওই বৃদ্ধ লোকটি কে ছিল ?" পাঁচু বললো -"বাবু ওই বৃদ্ধ লোকটি আর
কেউ নয় সে হলো সুস্মিতার বাবা যাকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল।
- দেবায়ন ভট্টাচার্য্য
Comments (0)