তোর ছেলের কাল পানিতে ডুবে মৃত্যু হবে।আমি তোর ছেলেরে আমার করে সাথে নিয়ে যাবো।
রহমত তার চেয়ারের পাশ থেকে একটা চ্যালাকাঠ হাত নিয়ে ছুঁড়তে যাবে তাকিয়ে দেখে,তার সামনে কেউ নেই।অথচ একটু আগেও একটি বুড়ি তার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।পুরো শরীর কালো কাপড়ে ঢাকা।রহমত বেশ ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে যায়।এই পরিষ্কার দিনের আলোতে ভুল দেখার কথা নয়।রাতেরবেলায় হলে হয়তো ব্যাপারটা মানা যেত।রহমতের মনে শঙ্কা জেগে উঠে।বেশ বড় একটা বিপদের মেঘ যেন কোথায় জমে আছে।গ্রামের মুরব্বিরা বলে,বিপদের কথা রহমত আগে থেকে দেখতে পায়।রহমতের এখনো স্পষ্ট মনে আছে,ছোটবেলায় একবার বাবার হাত ধরে হাটে গিয়েছিল বাজার করতে।পথে ফিরতে ফিরতে হঠাৎ তার শরীর কাঁপতে শুরু করে।রহমত তখন তার বাবাকে বলল,বড় কোনো বিপদ আসতেছে মনে হয়,বাপজান।আমার কেমন যেন লাগতেছে।রহমতের বাবা তার ছেলের কথা শুনে তখন বেশ ধমক দিলেও বাড়ি ফিরে দেখতে পায়,রহমতের দাদার নিথর দেহ মাটিয়ে পড়ে আছে।গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিলেন তিনি।
রহমতের আর মন সায় দিল না দোকানে।ঈষাণ কোণে মেঘ জমে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে।আশপাশে মানুষজনও তেমন নেই।সকাল থেকে খুব একটা বিক্রি হয়নি।আর একটু পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে।রহমত উঠে দাঁড়িয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে।বাইরে থাকা ছোট্ট কাঠের টেবিল ভেতরে ঢুকিয়ে ঝাপড়া ফেলে দেয়।দোকানে তালা ঝুলিয়ে পথ চলতে শুরু করে সে।বৃষ্টিতে মাটির রাস্তা কাঁদা হয়ে আছে।রহমত জুতাজোড়া হাতে নিয়ে কাঁদায় জোর কদমে পা ফেলে।কিছুদূর যেতেই পথে দেখা হয় ফরিদের সাথে।ফরিদ তার বাল্যকালের বন্ধু।সবসময় মুখে একটা হাসি ভাব লেগেই থাকে তার।রহমতের সামনে আসতেই ফরিদ একগাল হেসে বলল,এত তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে ফেললি যে?
-বেচা-বিক্রি খুব একটা নাই।বাড়িতে তোর ভাবিও একা।আকাশের অবস্থাও তো সুবিধার না,বলল রহমত।
ফরিদ আশপাশে একবার তাকিয়ে হঠাৎ রহমতের কানে ফিসফিস করে বলল,আশ্বিনের শুরু হইছে।তোর ছেলেরে ভালো করে দেখে রাখতে বলিস।কালো বুড়ি কিন্তু এই বর্ষায় তার বাসা থেকে বাইরে আসে।আমি এখন যাই তাইলে।
শিক্ষিত ছেলে রহমত।হাওড় অঞ্চলের পাঁচটা গ্রাম ঘুরলেও তার মতো এমন মেধাবী ছেলে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।পড়ালেখা শেষ করে সার-ঔষধের দোকান দিয়েছে সে।বিপদে-আপদে সবসময় তার থেকে ভালো পরামর্শ পায় গ্রামের সবাই।তবে আর পাঁচটা মানুষের মতো কুসংস্কারে বিশ্বাসী নয় রহমত।তার ধারণা,এসব কিছুই তাদের মনের একটা ভ্রান্ত কল্পনা।"ঝড়ে বক মরে,ফকিরের কেরামতি বাড়ে" ব্যাপারটা অনেকটা এমনই।কিন্তু ফরিদ চলে যেতেই পুরানো ভয়টা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে রহমতের।তার হঠাৎ সেই বুড়ির শেষ কথাটা মনে পড়ে-"তোর ছেলের কাল পানিতে ডুবে মৃত্যু হবে।আমি তোর ছেলেরে আমার সাথে নিয়ে যাবো।"রহমত ভাবছে,এই বুড়ি কি তাহলে সেই কালো শয়তান?গত এক সপ্তাহ ধরে একটি বুড়িকে দেখতে পায় রহমত।বুড়ি তার আশপাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।মুখে কিছু বলে না।হাত দিয়ে কি যেন ইশারা করে।কিন্তু আজ যা বলে গেল তা কি সত্যিই?নাকি তার নিজের মনের ভুল?
আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ।সারাদিন মুষলধারে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়বে।আর রাতে নামবে ঝুম বৃষ্টি।বৃষ্টির সে কি দাপট!মাঠঘাট পানিতে ডুবে রূপ নেয় হাওড়ে।চারদিকে মাছ ধরার ধুম পড়ে।ছেলে-বুড়ো জাল আর বল্লম নিয়ে ছুটে মাছ শিকারে।কিন্তু এই আনন্দের মাঝেও একটি শঙ্কা আছে হাওড় অঞ্চলের মানুষের।বর্ষায় কারো ঘরে নতুন বাচ্চা হলে তাকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয়।তাদের বিশ্বাস,চারদিকে থৈথৈ পানিতে যখন সবকিছু ভরপর তখনই এক কালো বুড়ির আগমন ঘটে হাওড়ে।তার শরীর জুড়ে ঢাকা থাকে কালো কাপড়ে।যার বাচ্চার উপর একবার চোখ পড়ে,অমাবস্যার রাতে সেই বাচ্চাকে পানিতে ডুবিয়ে তার সঙ্গে করে নিয়ে যায়।বর্ষা আসলেই এই সহজ-সরল মানুষগুলোর মনে ভয়ের দানা বাঁধে কালো বুড়ির শয়তানি রূপে।ঘরে নতুন বাচ্চা হলে হাজারটা আনন্দের মাঝেও আছে ভয়,সঙ্গে আছে হারানোর তীব্র শঙ্কা।
বাড়িতে এসেই রহমত তার স্ত্রী জরিকে ডাক দেয়।একটু পরেই মাথায় ঘোমটা দিয়ে জরি বাইরে আসে।এই সময়ে রহমতকে বাড়িতে দেখে অবাক চোখে তাকায় জরি।বলল,আপনে,এই অসময়ে বাড়িতে আসলেন যে?এখনও তো সন্ধ্যা হয় নাই।
রহমত কলপাড়ে গিয়ে ভালো করে পা ধুয়ে নেয়।মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই জরি এসে গামছা দেয়।রহমত মুখ মুছে বলল,দোকানে ভালো লাগতেছিল না।আর তুমি বাবুরে নিয়ে একা।তাই চলে আসছি দোকান বন্ধ করে।
জরি হেসে বলল,ভালোই করছেন।আকাশের অবস্থাও তো ভালো না।
বিকালের দিকে টিপটিপ বৃষ্টি পড়লেও সন্ধ্যায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল আকাশ ভেঙে।জরি জানালা খুলে বৃষ্টিতে হাত ভিজিয়ে বসে আছে।রহমত জরির দিকে তাকিয়ে ভাবছে,মেয়েটার ছেলেমানুষি এখনও যায়নি।কি সুন্দর লাগছে জরিকে!রহমত পেছন থেকে জরিকে জড়িয়ে ধরতেই জরি চমকে উঠে।আদুরে গলায় বলল,ইসস,কি করেন?আমার বুঝি শরম করে না?
রহমত জরির কাঁধে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,আদর করি বউ।রহমত ঠোঁট বাড়াতে যাবে এমন সময়ে বিছানায় শুয়ে থাকা রহমতের ছেলে রবিন কেঁদে উঠে।জরি নিজেকে ছাড়িয়ে হাসতে হাসতে ছেলেকে জাপটে ধরে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে বলল,আপনি একটা অসভ্য।
বৃষ্টির ঝাপটা ভেতরে আসতেই রহমত জানালা বন্ধ করে দেয়।দেয়ালে ঝোলানো পঞ্জিকার দিকে চোখ পড়তেই রহমত এগিয়ে আসে।জরির দিকে মুখ করে বলল,গত অমাবস্যা কখন গেছে,জরি?
জরি বলল,এইতো মাসখানেক তো হইবো।ক্যান আপনে কি করবেন?
মুহূর্তে আতঙ্ক যেন গ্রাস করে রহমতকে।হিসাবমতে,কালই তো অমাবস্যার অন্ধকার।গ্রামের লোকজন বলে,মৃত্যুর আগের দিন কালো বুড়ি দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর আর দেখা যায় না তাকে।রহমত গিয়ে আবার জানালা খুলে।সুপারি বাগানের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠে রহমত।বৃষ্টিতে কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।অন্ধকারে মুখ ঠিকমতো দেখা যায় না।দূর থেকে মনে হলো,ছায়াটি কালো কাপড় পড়ে আছে।রহমতের ভয়ে শরীর কাঁপতে শুরু করে।বেশ খানিকটা জোরে জানালা বন্ধ করতেই জরি কিছুটা লাফিয়ে উঠে বলল,কি হইছে?এমনে কেউ জানালা বন্ধ করে?মনে হয় যেন ভূত দেখছেন?
রহমত জরির কথার উত্তর দেয় না।চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে রবিনকে বুকে জড়িয়ে নেয়।রহমতের এমন আচরণে জরি কিছুটা অবাক হলেও হাসিমুখেই মেনে নেয়।সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা জন্ম নিবে এটাই তো পৃথিবীর নিয়ম।
পরদিন বেশ ভোরে ঘুম থেকে উঠে জরি।টিপটিপ বৃষ্টিতে রান্নার কাজ শেষ করে এসে দেখতে পায়,রহমত তখনও রবিনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।জরি এসে রহমতকে ডাক দেয়,এই সকাল হইছে তো।আর কত ঘুমাইবেন?
রহমত ঘুমচোখে কি যেন বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।জরি বেশ অবাক হয়।অন্যদিন রাঁধতে দেরি হওয়ায় অস্থির করে ফেলে তাকে।আর আজ ঘুম থেকে উঠছেই না।জরি আরও বেশ কয়েকবার রহমতকে ডেকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করে।কিন্তু শেষে বিরক্ত হয়ে বাইরে চলে যায়।সকাল দশটার দিকে ফরিদ আসে রহমতকে ডাকতে।রহমত তখন সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে কলপাড়ে বসে দাঁত ব্রাশ করছে।ফরিদ বেশ বিরক্তমুখে বলল,কিরে হাটে যাবি না?তোরে না পরশুদিন বললাম,আজ হাটবার।সঙ্গে অমাবস্যার দিন।জিনিসপাতি কমদামে বিক্রির সম্ভাবনা আছে।
রহমত বলল,নারে,শরীর ভালা না।তুই নৌকা নিয়া একা যা।আমি আজ বাড়িতেই থাকি।
ফরিদ রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল নিজ গন্তব্যে।জরি অনেক চেষ্টা করেও রহমতকে দোকানে পাঠাতে পারেনি।পুরুষ মানুষ বাসায় কি কাজ?লোকে তো ছিঃ ছিঃ করে বলবে,বউয়ের আঁচল ধরে বাসায় বসে থাকে।রহমত এসব কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে রবিনের পাশে বসে থাকে।মাঝে রবিন কান্না করলে জরি এসে খাইয়ে দেয়।রহমতের বারবার সেই বুড়ির কথা মনে পড়ে।আজই শেষ অমাবস্যা।বুড়ির থেকে যেভাবেই হোক রবিনকে বাঁচাতেই হবে।সময় যত গড়িয়ে আসছে,কুসংস্কার যেন রহমতের মনে গভীরভাবে বাসা বাঁধছে।যা এতদিন সে বিশ্বাস করেনি,আজ সেই বুড়ি তার সামনে এসে বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে।
দুপুরের রান্না শেষ করে জরি এসে দেখে,রহমত তখনও রবিনের পাশে শুয়ে আছে।জরি ব্যাপারটায় বেশ রাগ হলেও হাসিমুখে বলল,শুনেন,আমি গোসল করতে গেলাম।বাবুরে দেখে রাখেন।
জরি চলে যেতেই বাচ্চা ছেলেদের মতো রবিনের পাশে বসে রহমত খেলনা নিয়ে খেলতে শুরু করে।রবিন খিলখিল করে হাসে।হাত-পা নাড়িয়ে শব্দ করে।রহমত রবিনকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ বারান্দায় হাঁটে।একটু পরেই রবিন তার কাঁধে ঘুমিয়ে পড়ে।রবিনকে বিছানায় রেখে রহমত পাশে বসে থাকে।ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।শত চেষ্টা করেও চোখ মেলে তাকাতে পারছে না রহমত।
রহমত ঝাপসা চোখে দেখতে পেল,সেই কালো বুড়ি তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।হাত বাড়িয়ে রবিনকে তার কাছে ডাকছে।রবিনও বুড়িকে দেখে হাত-পা নাড়তে শুরু করেছে।বুড়ি দরজা ছেড়ে একটু সামনে আসতেই রবিন বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে পড়েছে।মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে বুড়ির পেছন পেছন হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।কোনো অদৃশ্য শক্তি যেন রহমতকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে।সে হাজার চেষ্টা করেও বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না।বুড়ি তার দিকে খিলখিল করে তাকিয়ে হেসে বলছে,"বলেছিলাম না,তোর বাচ্চাকে নিয়ে যাবো।তুই কিছুই করতে পারবি না।"
রহমতের চোখে পানি।তিন বছর পর তাদের কোল জুড়ে সাত রাজার ধন রবিন এসেছিল।আর আজ কিনা তার মৃত্যু হবে।কিছুতেই মানতে পারছে না রহমত।চিৎকার করে বলছে,রবিন,বাপজান,তুই এগিয়ে আয়।আমার কাছে আয়।ওই বুড়ি ভালো না।
ছোট্ট রবিন এসব কিছুই শুনছে না।সে হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।উঠোনে দাঁড়িয়ে সেই বুড়ি হাতের ইশারায় ডাকছে রবিনকে।তার হাসিতে চারপাশ যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে।বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির দাপট বেড়েই চলেছে।রবিন দরজা ছেড়ে এবার মাটিতে পা দিয়েছে।রহমত তখনও চিৎকার করে কাঁদছে।আর একটু পরেই খালপাড়।এই বর্ষায় তা ফুলে ফেঁপে উঠেছে।পানিতে একটু পা পড়লেই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।জরি সেদিন বলেছিল,চারপাশটা বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধিয়ে নিতে।অবহেলায় সে কথা কানে নেয়নি রহমত।নিজের ভুলে আজ রবিনের প্রাণ চলে যাবে ভাবতেই হু হু করে কেঁদে উঠে রহমত।হামাগুড়ি দিয়ে খালপাড়ে যেতেই রবিন পেছনে ফিরে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তার বাবার দিকে।রহমত তখনও বলছে,"বাপজান,ফিরে আয়।আমার বুকের মানিক তুই ফিরে আয়।"
রহমতের কথাগুলো কানে পৌঁছানোর আগেই খালের পানিতে পড়ে গেল রবিন।অমাবস্যার জোয়ারে মুহূর্তে ভাসিয়ে নিয়ে গেল উজানের দিকে।"রবিন" বলে জোরে চিৎকার দিয়ে ধড়মড় করে উঠে বসে রহমত।এতক্ষণ তাহলে সবকিছুই স্বপ্ন ছিল।ঘামে পুরো শরীর ভিজে আছে তার।বেশ বড় একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রহমত।কিন্তু পাশে ফিরে তাকাতেই আঁতকে উঠে সে।বিছানায় রবিন নেই।স্বপ্নের কথা মনে পড়ে তার।তাহলে কি কালো বুড়ি ঘুমের ফাঁকে তার রবিনকে নিয়ে হাওড়ের পানিতে চলে গেছে?
দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে রহমত।চারপাশ ঘন অন্ধকারে ঢেকে আছে।অমাবস্যার বৃষ্টি যেন সবকিছু তছনছ করে নিয়ে যাবে।তীব্র ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় রহমতের শরীর কেঁপে উঠে।উঠান জুড়ে চিৎকার করে ডাকে রবিনকে।কিন্তু বৃষ্টির শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া কিছুই শুনতে পায় না রহমত।দৌঁড় দেয় খালপাড়ের দিকে।খালপাড়ের পানি যেন উপচে পড়ছে।রহমত পাগলের মতো একদিক থেকে আরেকদিক ছুটতে শুরু করে কাঁদতে কাঁদতে।হঠাৎ মাটিতে রবিনের জুতোর একটা অংশ দেখে ধপাস করে বসে পড়ে রহমত।গতমাসেই মেলা থেকে রঙিন জুতো কিনে দিয়েছিল সে।তার মানে রবিন খালের পানিতে ভেসে গেছে।আর কখনো ফিরবে না।বুক চাপড়ে কাঁদতে শুরু করল রহমত।
এমন সময়ে জরির আওয়াজ কানে আসে রহমতের,আপনে,এখানে বসে আছেন ক্যান?কি হইছে রবিনের আব্বা?
রহমত মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে,জরি দাঁড়িয়ে আছে।আর তার কোলে রবিন হাসছে।রহমত ধড়মড় করে উঠে রবিনকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে।রহমতের এমন কান্ডে কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকায় জরি।কিন্তু রহমতের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।ছেলেকে ফিরে পেয়ে আনন্দে যেন আর ধরে না তার।রহমত ভুলেই গিয়েছিল সে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে।সঙ্গে তার কোলে রবিন।তাড়াতাড়ি শাড়ির আঁচলে রবিনকে ঢেকে ভেতরে চলে যেতে বলে রহমত।
এমন সময়ে মাইকের আওয়াজ শুনতে পায় রহমত,একটু আগে উত্তরপাড়ার হারু মাঝির ছেলে হাসান পানিতে ডুবে মারা গেছে।বাদ এশা তার জানাযা হবে।
রহমতের মুখ দিয়ে আফসোসের একটা শব্দ বের হয়।পুরো শরীরে তার কাঁদা লেগে আছে।ধীর পায়ে গিয়ে কলপাড়ে দাঁড়ায় সে।হঠাৎ একটা কালো ছায়ায় চোখ আটকে যায় রহমতের।তার সামনে সেই কালো বুড়ি দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে শয়তানি হাসি।হাড় হিম করা কন্ঠে বলল,তোর কপাল সত্যিই খুব ভালো।হারু মাঝির ছেলেটা আগেই পানিতে ডুবে শেষ।তাই তোর ছেলেরে সঙ্গে নিতে পারলাম না।চোখের নিমিষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সেই বুড়ি।
রহমত বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে।সত্যিই তাহলে কালো বুড়ি আছে এই হাওড় অঞ্চলে!
.........সমাপ্ত..........
written by Habib Khan Hridoy
Comments (0)