Search

আমার অসম্পূর্ণতাই তুমি সম্পূর্ণ

  • Share this:

-- তোর মতো মেয়েদের থেকে এর চেয়ে বেশি আর কী আশা করা যাই!

মামীর মুখে এমন কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায় আফরা। এখন সেও তাদের বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। সে তাচ্ছিল্য হেসে আবার ছুটে চলে গেল। মামী দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে হাত লাগালেন।

তো পরিচয় পর্বে যাওয়া যাক...

আফরা হচ্ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে রহমান সাহেব ও আফিফা রহমানের একমাত্র মেয়ে। আফিফা রহমান ও তার স্বামীর গায়ের রঙ ফর্সা হলেও আফরার গায়ের রঙ কালো;কালো বললেও ভুল হবে কিছু শ্যামলা বলা যায়। মুখখানা মায়াবি যখন হাসে তখন মুখে যেন মুক্ত ঝড়ে। কিন্তু এই এক গায়ের রঙ তার জীবন তছনছ করে দিয়েছে। সে শ্যামলা প্রকৃতির হওয়ায় তার মা বাবা কারো সামনে যেতে দিতেন না তাদের সম্মানহানি হবে এই চিন্তায়। আফরাও হাসিমুখে সব মেনে নিয়েছে।

কিন্তু এতটুকুতেই সন্তুষ্ট হয় নি তারা! আফরাকে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।

মামা মামী নিঃসন্তান হওয়ায় আফরাকে খুব ভালোবাসতো। নিজের সন্তানের মতো, ভালোবাসায় কোনো ভেজাল নেই।

কিন্তু আফরার বিয়ের বয়স হতেই নানা জায়গা থেকে প্রস্তাব আসে কিন্তু পাত্রী শ্যামলা হওয়ায় ওদের পছন্দ হয় না। এর মাঝে একবার আফরা বাবা মায়ের কাছে ফিরেছিল সেখানে পাত্র দেখতে আসায় তার মা পাত্রের সামনে যেতে দেন নি। তারপর মামীর কাছেও অনেক প্রস্তাব আসে।

শেষ পর্যন্ত আফরা আর কাউকে বাসায় আসতে বারণ করে সে কারো সামনে যাবে না। মামী বাধ্য হয়ে বারণ করে দেয় সবাইকে। তার গায়ের রঙ নিয়ে মামীর কোনো রকম অভিযোগ নেই কিন্তু মেয়েটাকে বলে কয়ে ঘরে রাখা যায় না। সবসময় এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে। এমন করলে যেমন গায়ের রঙ কালো হবে তার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিন্তু আফরা এসব শুনে না।

তাই বাধ্য হয়ে আজকে মামী এই কথাটা বলেছিল। মামীর কষ্ট হয় আফরার সাথে এমন ব্যবহার করতে।

আফরা মনে করে যেখানে মা বাবা তাদের সম্মানের জন্য নিজের সন্তানকে সাথে রাখতে চাই না সেখানে মামা মামী তো বিশাল ব্যাপার।

রুমে বসে বসে এসব ভাবছিল এমন সময় মামা-মামীর আগমন ঘটে রুমে

-- মামা মামী তোমরা? কিছু বলবে?

-- হু

-- কী বলবে? চলে যেতে হবে আমাকে? আচ্ছা ঠিক আছে ভোর হতেই রওনা দিয়ে দিব কেউ জানতে পারবে না। তু....

-- এই মেয়ে চুপ থাক(মামা)

-- তোকে আমরা কেউ বলেছি এমন?

-- তবে?

-- শোন কালকে এই পাত্র তোকে দেখতে আসবে, বাড়ি থেকে বেরোবি না। এই কথাটা শোন মা!

-- না কোনো দরকার নেই তোমাদের অপমান হোক আমি চাই না তার চেয়ে এখান থেকে চলে গেলেই ভালো হতো।

-- চুপ থাক একদম আমরা অপমানিত হচ্ছি তোকে কে বলল?

-- আমি জানি সব মা বাবা তো আমাকে এইজন্যই কারো সামনে যেতে দেই না।

-- তোর মা বাবা আর আমরা এক হলাম না রে!(মামা আফরার মাথায় হাত বুলিয়ে)

-- কেন মামা?

-- এসব বাদ দে বুঝবি না কালকে বাড়ি থেকে বেরোবি না ঠিক আছে? বিকেলে ওরা আসবে।

অফরা আর বারণ করলো না।

সকালে,

পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে আফরাকে মামা মামী ওদের সামনে আনতেই পাত্রপক্ষের লোকজন একজন আরেকজনের দিকে তাকালো এটা দেখে আফরা কিছু ইতস্তত বোধ করলো,

আফরাকে বসিয়ে তারা অনেককিছুই জিজ্ঞাসা করলো আফরাও ভদ্র সহকারে উত্তর দিল। তাদের চেহারা দেখে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।

তারা জানাবে বলে চলে যায় সবাই ভেবেই নিয়েছে এই বিয়েও ভেস্তে যাবে।

পরদিন পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে কল আসে। মামী মামা ভেবেছে না বলবে কয়েকজন পাত্রপক্ষ তো অপমান করেছিল ফোন করে তাই প্রস্তুত হয়ে ফোন রিসিভ করলো।

কিন্তু ওপাশের কথা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিল না! পাশে মামী মামার চেহারা দেখে বুঝতে পারছে না কিছুই। মামা কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে গম্ভীর হয়ে বসে রইল তারপর আফরাকে ডাকল। কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ বসে থাকে তারপর বলে,

"আফরা, মা!"

"জ...জ্বী মামা"(গলা কাঁপছে আফরার)

"আলহামদুলিল্লাহ!"(হেসে উঠে)

"তোকে ওদের পছন্দ হয়েছে!"

আফরা কথা বলতে পারছে না; সত্যিই কী এমন?!

মামী তো খুশিতে পাড়ায় মিষ্টি বিলিয়েছে। তার কিছুদিন পরই ঘরোয়া ভাবে ওদের বিয়ে হয়ে যায়। মামা মামীর ইচ্ছা ছিল ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়ার কিন্তু আফরা চাইনি।

এভাবেই কাটছে আফরার দিন এখানে খুব সুখে আছে সে। তার হাসবেন্ড ফাহিম ও পরিবারের সবাই তাকে খুব ভালোবাসে।

একদিন আফরা আর তার শাশুড়ি কাজ করছিলেন হঠাৎ কলিং বেল বাজলো আফরা দরজা খুলে দেখল মামা মামী তার মুখে হাসি ফুটল যেই হাসি দুর্লভ! পাশে তাকাতেই মূহূর্তেই হাসি উরে গেল গম্ভীর মুখে বলল,

-- মামা মামী তুমি কাদের নিয়ে এসেছো? যাইহোক এসেছেই যখন আপ্যায়ন হবে। এই বাড়িতে কোনো গেস্ট আপ্যায়ন ছাড়া ফিরে না। ভেতরে এসো।

-- আফরা শোন...(আফিফা)

আফরা না শুনেই ভেতরে চলে গেল। সবাই জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে তাদের মাঝে মুখে হাসি নেই দুজনের আফিফা রহমান ও রহমান সাহেবের।

আফরা তাদের সাথে ছিল না কাজের বাহানায় রান্নাঘরে ছিল সবার অতিথি আপ্যায়নে পুরো সময় শেষ হলো। সবাই রওনা দিল। আফরা মামা মামীকে জড়িয়ে ধরে চোখে জল নিয়ে বিদায় জানালো। মামা মামীর চোখেও জল ছিল।

যাওয়ার আগে রহমান সাহেব শুধু এটাই বলেছিলেন,

-- আমার মেয়েকে ভাই ও ভাবী ভালো একটা জায়গায় বিয়ে দিয়ে সুখী করেছেন। এতে খুব খুশী আমি।

-- হুম আপনাদের ঘাড়ের বোঝা তো নামিয়েই ফেলেছেন বহুবছর আগেই।

এইটুকু বলেই আফরা ঘরে চলে গেল।

৹৹৹

আজ মনটা প্রচন্ড খারাপ আফরার। বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে এমন সময় কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আফরা চমকে উঠে পরক্ষণেই চিনতে পারে এই ছোঁয়া, এটা আর কেউ নয় এটা ফাহিম। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফাহিমের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলতে থাকে,

-- আচ্ছা আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন কেন? আপনার মতো সুন্দর স্মার্ট বড়লোক ছেলের জন্য তো আরো খুব সুন্দর মেয়ে ছিল আমি তো কালো অসুন্দর!

-- কে বলেছে তুমি কালো অসুন্দর? তুমি আমার চোখে মায়ের পর সবচেয়ে সুন্দর নারী! তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তোমার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি; তুমি বিহীন আমি অসম্পূর্ণ! এই অসম্পূর্ণ ছেলের জীবনে #আমার_অসম্পূর্ণতাই_তুমি_সম্পূর্ণ

<<<<<<<<<<<|সমাপ্ত|>>>>>>>>>>>

#অনুগল্প

#আমার_অসম্পূর্ণতাই_তুমি_সম্পূর্ণ

#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম

(আপনাদের কাছে গল্পটা কেমন লেগেছে জানাবেন)

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।